এক নেতার এক পদ কমিটি গঠনে বড় বাধা ‘চার মাসেও কমিটি দিতে ব্যর্থ বিএনপি’
কিরণ সেখ : দলের কাউন্সিলের সময় পেরিয়ে চার মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি। দলের শীর্ষ নেতাদের ভাষ্য, জাতীয় কাউন্সিলে কাউন্সিলররা কমিটি গঠনের দায়িত্ব বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপর অর্পণ করেছেন। ফলে কমিটি গঠনের কাজগুলো বেগম জিয়া নিজে দেখছেন। আর পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে নাগাদ ঘোষণা করা হবে এই বিষয়টি একমাত্র বিএনপি চেয়ারপারসন বলতে পারবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি চেয়ারপারসেন দুই উপদেষ্টা জানায়, জাতীয় কাউন্সিলে দলের গঠনতন্ত্রে কিছু নতুন সংশোধনী আনা হয়েছে। এর মধ্যে এক নেতার এক পদ সংশোধনীটি কমিটি গঠনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সংশোধনীর ফলে জেলা পর্যায়ের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কোনো নেতাকেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি ঢাকা মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়েও নেতাদের কোনো পদ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ তারা আগে থেকেই অন্য একটি পদে অবস্থান করছেন। মূলত এই কারণেই স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাসহ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে দেরি হচ্ছে।
এদিকে, দলের জাতীয় কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যে চাঙ্গাভাব তৈরি হয়েছিল তা ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, দলের গঠনতন্ত্রে এক নেতার এক পদ সম্পৃক্ত করায় কমিটি গঠনের সময় কিছুটা জটিলতা তৈরি হচ্ছে। তবে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় অনেক নেতাই জেলা পর্যায়ের কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন এবং অনেকের পদত্যাগ করার প্রক্রিয়া চলছে।
কমিটি প্রসঙ্গে নোমান বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন কমিটি গঠনের কাজ করছেন। সুতরাং খুব শিগগির কমিটির অন্যান্য পদের নাম ঘোষণা করা হবে।
অপরদিকে যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বঞ্চিত মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, যারা বিগত আন্দোলনে রাজপথে ছিলেন না এমন অনেক জুনিয়র নেতাকে বড় পদে দেওয়া হয়েছে। মূল্যায়ন করা হয়নি আন্দোলন-সংগ্রামে পরীক্ষিত নেতাদের। আর এ কারণে অনেক নেতাকর্মী দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন না।
এই বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বলেন, দলের প্রতি ও নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন সঠিকভাবে যদি করতে চান তাহলে একটু সময় বেশি নিয়েই করা উচিত। আর বিএনপি সেই কাজই করছে। তবে সবাইকে মনে রাখতে হবে, আওয়ামী লীগ বারবার তাদের কাউন্সিলের তারিখ পরিবর্তন করেও এখন পর্যন্ত কাউন্সিল করতে পারেনি। আর আমরা ইতোমধ্যে মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদের নাম ঘোষণা করেছি।
কবে নাগাদ কমিটি ঘোষণা হতে পারে- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলের কাউন্সিলররা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপর এই দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। তাই কমিটি ঘোষণার বিষয়ে একমাত্র বেগম জিয়াই বলতে পারবেন। এক নেতার এক পদের কিছু জটিলতা থাকলেও বিএনপির সকল নেতা এই নীতির পক্ষে বলে জানান হান্নান শাহ।
গত ১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে বিএনপি চেয়ারপারসের উপর কাউন্সিলররা কমিটি পুনর্গঠনের দায়িত্ব ও ক্ষমতা দেন। এরপর দলের মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদ ছাড়া গত চার মাসে অন্য কোনো পদের নাম ঘোষণা করা হয়নি। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি