বরগুনা ও ঝালকাঠির গ্রেফতারকৃত দুর্ধর্ষ জঙ্গিরা জামিনে দক্ষিণাঞ্চলে জঙ্গি হুমকিতে উৎকণ্ঠা বেড়েছে জনগণের
বিপ্লব বিশ্বাস : দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল, বরগুনা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরবাসীদের জঙ্গি হামলার ভয় দিন দিন বেড়েই চলেছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, বরগুনা থেকে বিভিন্ন সময় গ্রেফতারকৃত শতাধিক জঙ্গি জামিনে বের হয়ে পলাতক থাকায়। যে কারণে উদ্বেগ বেড়ে গেছে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের। সম্প্রতি একের পর এক জঙ্গি হামলা পরও সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনের বিশেষ অভিযানেও তাদের কেউ গ্রেফতার হয়নি। এ নিয়ে সংশয়ের পাশপাশি পিরোজপুরের চার পুরোহিতকে হত্যার হুমকির কারণে উদ্বেগ রয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝেও।
খেঁজ ানিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বরগুনা সদর উপজেলার ধুপতী গ্রামের আরাবিয়া এমদাদুল উলুম হাফিজিয়া কওমি মাদরাসা থেকে ৩ জন দুর্ধর্ষ জঙ্গিকে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় গ্রেফতার করে পুলিশ। সেখানে ওই সময় ৫০ জন কথিত ছাত্র (জঙ্গি) প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল। এরপর ২০০৪ সালে সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের শিয়ালীয়া মাদরাসায় জঙ্গি প্রশিক্ষণের সময় আরও ৩৩ জঙ্গিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব জঙ্গির অনেকেই ২০০৫ সালে দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলায় জড়িত ছিল। বর্তমানে গ্রেফতার হওয়া এসব জঙ্গির অধিকাংশই মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। এরপর ২০১৩ সালের ১২ আগস্ট বরগুনায় তৃতীয় বারের মতো শহরের উপকণ্ঠ খেজুরতলা থেকে বৈঠকরত অবস্থায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীম আনসারীসহ ৩১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আটক হওয়া এই ৩১ জনের মধ্যে মুফতি জসীম আনসারী ছাড়া বাকি সবাই জামিনে রয়েছেন।
এছাড়া ঝালকাঠিতে জেএমবির বোমা হামলায় নিহত সহকারী জজ জগন্নাথপাড়ে হত্যার মামলার অন্যতম আসামির বাড়ি এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীম আনসারীর বাড়ি বরগুনায় হওয়ায় জঙ্গিদের তৎপরতা নিয়েও উদ্বিগ্ন সচেতন মহল।
আটক জঙ্গিদের জামিনে বের হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বরগুনার অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আখতারুজ্জামান বাহাদুর বলেন, আটক জঙ্গিরা যাতে বিচারিক আদালত থেকে জামিনে বের হতে না পারে, সেজন্য আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করি। কিন্তু তারা যখন বিচারিক আদালত থেকে জামিনে বের হতে না পারে তখন তারা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়ে জামিন নিয়ে আসেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের করার তেমন কিছু থাকে না।
এ বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক পিপিএম বলেন, বরগুনা জেলাটি বাংলাদেশের একটি উপকূলীয় জেলা। এ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার দুরাবস্থার কারণে বিভিন্ন সময় জঙ্গিরা এখানে আশ্রয় নিয়ে থাকে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাগুলোর পরে জঙ্গিদের নির্মূল করতে পুরো জেলায় গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, গোয়েন্দা কমিউনিটি পুলিশ এবং সাধারণ মানুষের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে তা যাচাই করা হচ্ছে।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, পিরোজপুর সদর থানার তেজদাসকাঠী, কলাখালী, টোনা, জুজখোলাসহ আরও বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, অপরিচিত এসব লোকজন সুবিধাবাদী আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতার ছত্রছায়ায় এলাকায় অবস্থান করছে। অথচ তারাও জানে না এদের আসল পরিচয়। পিরোজপুর, নাজিরপুর, জিয়ানগর, মঠবাড়িয়া সদরেরও প্রায় ৯টি ইউনিয়ন রয়েছে যেখানে অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা বেড়ে গেছে। আবার এমনও অভিযোগ আছে অত্র এলাকায় বেশকিছু মসজিদ, মাদ্রাসা এবং এতিমখানা রয়েছে যেখানে রাতে অবস্থান করে অপরিচিত ব্যক্তিরা। ধারণা করা হচ্ছে, এরা কোনো উগ্র সংগঠনের সদস্য হতে পারে।
এ ব্যাপারে পিরোজপুরের এসপি ওয়ালিদ হোসেন আমাদের অর্থনীতিকে জানান, পুরোহিত হত্যার হুমকি দেওয়ার পর গোটা পিরোজপুরে গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে আগন্তুক ব্যক্তিদের। জঙ্গি সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। প্রয়োজন মনে হলে কিছু কিছু এলাকা চিহ্নিত করে অভিযান চালানো হবে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি