‘আমরা তুরস্কে আছি, ভাল আছি’
মাসুদ আলম : গত বছরের রমজান মাসে বিদেশে যাওয়ার পর ডা. খন্দকার রোকনউদ্দীন ও তার স্ত্রী অধ্যাপক নাইমা আক্তারসহ পরিবারের সদস্যরা তেমন কারো সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। সদ্যসমাপ্ত রমজান মাসে হঠাৎ নাইমা তার ছোট বোন ডা. হালিমা আক্তারকে ফোন করেন। জানান, তারা সবাই তুরস্কে আছেন। চিন্তার কোনো কারণ নেই। ভালই আছেন। এসব কথা বলার পর ফোনের লাইনটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারপর নাইমার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি হালিমার। গতকাল মঙ্গলবার নাইমার বোন হালিমা এসব কথা বলেন।
রোকনউদ্দীন ও নাইমার যোগ নিয়ে তাদের সহকর্মী ও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। তবে তুরস্কে গিয়ে তারা আইএসে যোগদান করবেন তা পরিবারের কেউই ভাবতে পারেনি।
জানা গেছে, খিলগাঁও চৌধুরীপাড়ার বাড়িটি দেখাশোনা করছেন রোকনউদ্দীনের বড় ভাই আফাজউদ্দিনের সন্তানরা। তারাই বাসাভাড়া তুলছেন। ভবনের তৃতীয় তলায় থাকেন রোকনউদ্দীনের ভাতিজি। বিদেশে যাওয়ার পর মাঝে মধ্যে আফাজউদ্দিনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতেন রোকনউদ্দীন। সেখানে চাকরি করছেন বলে তাকে জানান। শিশু হাসপাতাল থেকে চাকরি ইস্তফা নেওয়ার সময় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। সেখানেই থাকবেন। নাইমা আক্তার যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের (এমএম কলেজ) উদ্ভিদবিদ্যার শিক্ষক ছিলেন। ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর যশোর এমএম কলেজে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন নাইমা আক্তার। এর আগে তিনি রাজধানীর ইডেন কলেজে কর্মরত ছিলেন।
ডা. হালিমা আহমেদ বলেন, গত বছর রোজার সময়ে হঠাৎ একদিন তার বোন তাকে জানান, সপরিবারে তারা বিদেশ যাবেন। এর ২/৩ দিন পর একদিন সন্ধ্যায় তাকে আবার জানান, ওইদিন রাত ২টায় তাদের বিদেশ যাওয়ার ফ্লাইট। প্রথমে তারা মালয়েশিয়া যাবেন। এরপর সেখান থেকে তুরস্কের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। তার স্বামী রোকনউদ্দীন সেখানে একটি হাসপাতালে চাকরি পেয়েছেন। দীর্ঘদিন যোগাযোগ না করায় তাদের মধ্যে একটু সন্দেহ জন্ম নেয়। কিন্তু তারা আইএসে যোগদান করবে এটি তাদের জানা ছিল না।
এমএম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মিজানুর রহমান জানান, বিদেশে যাওয়ার কথা বলে ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই ৪৬ দিনের ছুটি নেন সহযোগী অধ্যাপক নাইমা আক্তার। ওই বছরের ২৮ আগস্ট তার ছুটি শেষ হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত তিনি কাজে যোগ দেননি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় অর্ধগড় বেতনে তার ছুটি মঞ্জুর করেছিল। তিনি আরও বলেন, নাইমা আক্তার ফিরে না আসার বিষয়টি কলেজের সেসময়ের অধ্যক্ষ নমিতা রানী বিশ্বাস শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানান। এখন শুনছি তিনি সপরিবারে দেশ ছেড়েছেন।
ওই বাসার কেয়ারটেকার বলেন, বিদেশে যাওয়ার পর স্যারের সঙ্গে আর কথা হয়নি।
রামপুরা থানার পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিষয়টি এখন কাউন্টার টেরোরিজম তদন্ত করছে। আমরা তদন্তে যেসব বিষয় পেয়েছি তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের অনেকেই জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করে আত্মগোপন করে আছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারাও আইএসে যোগদান করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি