নারীরাও যুক্ত হচ্ছে জঙ্গি কার্যক্রমে ‘খোঁজাখুঁজি করে লাভ নেই আমি পবিত্র জায়গায় আছি’
বিপ্লব বিশ্বাস : স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না নিখোঁজের ঘটনা। নুতনভাবে যোগ হচ্ছে নারীদের নামও। অভিযোগ রয়েছে, নিখোঁজ নারীরাও জঙ্গি আইএসের সদস্য হয়ে দেশে নতুবা দেশের বাইরে অবস্থান করছে। তবে নিখোঁজের পরপরই সাধারণ ডায়েরি করা হলেও পুলিশ তদন্তে নেমে নাগাল পাচ্ছে না তাদের। এ থেকে সংশয় এসব নিখোঁজ নারীরা কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জিহাদি পথ বেছে নিয়েছে।
জানা যায়, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার মাশুরগাঁও গ্রামের নুরুন নাহার ইরা (১৮) নামের এক কলেজছাত্রী এক মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। পরিবারের ধারণা, ওই ছাত্রী কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। ইরা শ্রীনগর সরকারি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। গত ১৯ জুন নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি তিনি।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ইরার নিখোঁজের ঘটনায় ১০ জুলাই তার মা শামীমা আক্তার শ্রীনগর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেন। পুলিশ ওই ছাত্রীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি জিহাদি বই উদ্ধার করেছে বলে জানান শ্রীনগর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) শামসুজ্জামান বাবু। তিনি বলেন, গত রোববার পুলিশ কলেজছাত্রীর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ‘বেহেশতে যাওয়ার পথ’ ও ‘মহিলাদের ওয়াজ’ নামে দুটি জিহাদি বই উদ্ধার করেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে করা জিডির সূত্র ধরে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। ইরার মা শামীমা আক্তারের শঙ্কা, তার সন্তান জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়ে পড়েছে। তিনি জানান, নিখোঁজ হওয়ার পর একদিন মোবাইল ফোনে কথা হলে ইরা তার মাকে জানায়, সে পবিত্র জায়গায় আছে খোঁজাখুঁজি করে লাভ নাই।
ইরার বাবা ইয়াকুব আলী জানান, শ্রীনগর উপজেলার সমষপুর স্কুল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজ থেকে ২০১৫ সালে এসএসসি পাস করে ইরা। এরপর শ্রীনগর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। স্কুলে পড়ালেখার সময় সে নামাজি ছিল না, বোরকাও পরত না। কিন্তু নিখোঁজ হওয়ার কিছুদিন আগে থেকে হঠাৎ করেই সে বোরকা পরা শুরু করে। তারপর একদিন বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যায়। কলেজে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে সে আর ফেরেনি।
সমষপুর স্কুল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম শিকদার জানান, হঠাৎ করেই ইরা নামাজি হয়ে ওঠে। বোরকা পরতে শুরু করে। নিখোঁজ হওয়ার কারণে ধারণা করা হচ্ছে, সে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার হুদাপাড়া গ্রামের মাদরাসাছাত্রী খাদিজা খাতুনও (১৩) নিখোঁজ রয়েছে। দীর্ঘ ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও তার কোনো সন্ধান মেলেনি। নিখোঁজ ছাত্রী খাদিজা খাতুন হুদাপাড়া গ্রামের ওসমান গনির মেয়ে এবং নাটুদা বালিকা মাদরাসার ৭ম শ্রেণির ছাত্রী।
তার পরিবার জানায়, গত ৯ জুলাই সকালে মাদরাসায় যাওয়ার কথা বলে খাদিজা খাতুন বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর সে আর বাড়ি ফিরে আসেনি। দামুড়হুদা থানার ওসি আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ব্যাপারে খাদিজার বাবা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
এদিকে, জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বেগুন গ্রামের আমিনুল এহসান অপুকে (২০) নয় মাস ধরে খুঁজছে তার পরিবার। নিখোঁজের পর, ২০১৫ সালের ৬ অক্টোবর অপুর বাবা গাফফার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, অপু বগুড়ার একটি বেসরকারি কলেজে পড়াশোনা করতেন। ২০১৫ সালের ৬ কক্টোবরের কিছু দিন আগে বগুড়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। কালাই থানা পুলিশ বিভিন্ন থানায় বেতার বার্তা পাঠিয়ে তার অনুসন্ধানের চেষ্টা চালাচ্ছে।
জয়পুরহাট পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, জেলায় এ পর্যন্ত নিখোঁজের বিষয়ে কালাই থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি রয়েছে। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে জেলাজুড়ে সচেতনতামূলক সভা-সমাবেশও অব্যাহত রয়েছে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি