হুমকির মুখে থাকা মন্ত্রীরা এড়িয়ে চলছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সতর্কতাও বাড়িয়েছেন
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী রয়েছেন ভীষণ ঝুঁকির মুখে। তাদের উপর যেকোনো সময় হামলা হতে পারে। এই আশঙ্কা তারা নিজেরাও করছেন। এই আশঙ্কা পুলিশ কমিশনারের তরফ থেকে বার্তা পাওয়ার আগেই তারা সতর্ক হয়েছেন এবং তাদের নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে। তারপরও উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা থামছে না।
সরকারের নীতিনির্ধারক একজন মন্ত্রী বলেন, আমরা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। একে একে ভেঙে দিচ্ছি জঙ্গিদের আস্তানা। তাদের বিভিন্ন ধরনের হামলার পরিকল্পনার কথা জেনে আমরা সেগুলো ব্যর্থ করে দিচ্ছি। এই জন্য আমাদের উপর তারা ক্ষুব্ধ। তারা চেষ্টা করতে পারে বড় ধরনের ঘটনা ঘটানোর। সেই জন্য তারা মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে যে কাউকেই টার্গেট করতে পারে।
একটি সূত্র জানায়, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নিরসনের বিষয়টি ছাড়াও ওই গ্রুপের পাশাপাশি আরও একটি গ্রুপের তরফ থেকে বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর উপর হামলার আশঙ্কা রয়েছে। এরমধ্যে কমপেক্ষ পাঁচ-ছয়জন বেশি রয়েছেন। তাদের একজন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। আরেকজন আদালতের রায় কার্যকর করার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আরেকজন তাদের বিচারের দাবিতে কাজ করছেন। এছাড়াও আরও একজন মন্ত্রী রয়েছেন যিনি তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে কথা বলে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। এছাড়াও আরও এক মন্ত্রী রয়েছেন যিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সঙ্গে শুরুতে সম্পৃক্ত ছিলেন, এখন সেখানে নেই। দফতর বদল হলেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
ঝুঁকির মুখে থাকা একজন মন্ত্রী বলেন, আমি জানি জামায়াত, শিবির ও মীর কাসেমের লোকেরা আমাদের উপর যেকোনো সময় হামলা করতে পারে। এমনকি হত্যার চেষ্টাও করতে পারে। আমরা তাদের দলের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করছি এটা তাদের পছন্দ নয়। তারা সরকার হটাতেও পরিকল্পনা করেছে। দেশে অস্থিরতা তৈরি করেছে। তারা বিচারকাজ বানচাল করার জন্য নানা উদ্যোগ নিলেও সফল হতে পারেনি। এই কারণে এখন তারা সরকারের নীতিনির্ধারকদের উপর ও এই বিচারের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের উপর হামলা করতে পারে।
এদিকে ঝুঁকির মুখে থাকা আরেক মন্ত্রী বলেন, আমার উপর হামলা হতে পারে। তারা আমাকে প্রাণেও মেরে ফেলতে পারে। এই চিন্তা করে বসে থাকলে তো আর হবে না। আমাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম করে যেতে হবে। মীর কাসেমের ফাঁসির আদেশের রিভিউ শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এটা শেষ হলে রায় বহাল থাকলে তা কার্যকর করব। এই জন্য এখন আদালতের দিকে চেয়ে আছি। কিন্তু মীর কাসেম তার বিচার বানচাল করতে দেশে-বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করা ছাড়াও তার লোক দিয়ে কারাগারে হামলা করাতে পারেন। তাকে ছিনতাই করে নেওয়া হতে পারে। এছাড়াও সরকারের মন্ত্রী ও অন্যান্যদের উপর হামলা করতে পারে। এই সব নানা তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। সেই সব বিষয় বিবেচনা করে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। সতর্কতা অবলম্বন করা হলেও জঙ্গি-শিবির এখন একাকার হয়ে যাওয়াতে আশঙ্কা বাড়ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রতিনিয়ত আমরা নানা হুমকি ও হামলা হতে পারে এমন খবর পাচ্ছি। আমাকেও নানা কথা বলা হয় ফোন করে। আমাকে ফোন করে যেসব কথা বলা হয় তা ভীষণ ভয়ঙ্কর। কিন্তু আমরা চেষ্টা করেছি ওই সব হুমকি দাতাদের খুঁজে বের করার। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না কারণ ওই সব ফোন করার জন্য আন্তর্জাতিক সব ফোন নম্বর ব্যবহার করা হচ্ছে। ওইগুলো বাংলাদেশের গেটওয়ে দিয়ে প্রবেশ করছে না। আন্তর্জাতিক গেট হয়ে প্রবেশ করছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এই ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে। তারা সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নিয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রীদের যে কাউকে টার্গেট করতে পারে। আর এই কারণেই মন্ত্রীদের উপর হামলার আশঙ্কা থেকে পুলিশ কমিশনার এসএমএস দিয়ে তাদের সতর্ক করেছেন। মন্ত্রিসভার সদস্যদের সতর্ক করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি মন্ত্রীদের মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে এই সতর্ক করেন।
কমিশনারের পাঠানো বার্তায় বলা হয়, গোয়েন্দা সূত্র থেকে জানতে পেরেছি যে, জঙ্গি গ্রুপ যেকোনো সময় মন্ত্রিসভার যেকোনো সদস্যের উপর হামলা চালাতে পারে। আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ নির্দেশনা দিয়েছি। অনুগ্রহ করে সতর্ক থাকুন এবং আপনার গানম্যান ও নিরাপত্তা দলকে বিষয়টি অবহিত করুন।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা নিজেরাও নিজ নিজ নিরাপত্তা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। এছাড়াও তাদের মন্ত্রণালয়ের স্টাফদেরও সতর্ক করবেন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী এই ব্যাপারে কাজ করছেন। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম