ইয়াছিন রানা : টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো সাংগঠনিকভাবে তেমন শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেনি। সরকারি কাজে নেতারা ব্যস্ত থাকায় সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রতি মূল দলের তেমন নজরদারি নেই গত কয়েক বছর ধরে।
ফলে অধিকাংশ সহযোগী সংগঠনই সাংগঠনিকভাবে নাজুক হয়ে পড়ছে। দলটির ৭ সহযোগী সংগঠনের সবগুলোর কমিটিই এখন মেয়াদোত্তীর্ণ। এর মধ্যে ৪টি সংগঠনের সম্মেলন হয়েছে এক যুগ থেকে দেড় দশকের বেশি সময় আগে। মূলত দলের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা না আসার কারণেই এখনো কোনো সংগঠন সম্মেলনের প্রস্তুতি নেয়নি বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, মূল দলের ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রের বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করলেও সহযোগী সংগঠনগুলোর ক্ষেত্রে নজর দেওয়া হয় না। আর নেতৃত্ব পাওয়ার পর সহযোগী সংগঠনের নেতারাও তা দীর্ঘ সময় ধরে রাখতে চান।
এছাড়া আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলনে কয়েকটি সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা মূল দলে দায়িত্ব পাবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। সেজন্য তারা এখন মূল দলের সম্মেলনের অপেক্ষায় আছেন, দায়িত্ব পাওয়ার পর সহযোগী সংগঠন থেকে সরে দাঁড়াবেন তারা।
মহিলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০০৩ সালের ১২ জুলাই। তখন সভাপতি হন আশরাফুন্নেসা মোশাররফ এবং সাধারণ সম্পাদক হোন ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা। ২০০৯ সালে ইন্দিরা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মনোনীত হলে সংগঠনটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পিনু খান তার স্থলাভিষিক্ত হোন।
কবে নাগাদ সম্মেলন হতে পারে জানতে চাইলে সংগঠনটির সভাপতি আশরাফুন্নেসা মোশাররফ বলেন, মূল দলের সম্মেলনের পরই আমাদের সম্মেলন হবে।
দীর্ঘ এক যুগেও সম্মেলন না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী না বললে তো সম্মেলন করতে পারি না। এবার আমি তাকে বলেছি, তিনি বলেছেন ‘দিয়ে দাও’। এর আগেও আমি সম্মেলনের কথা বলেছিলাম।
এদিকে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নবীন দল যুব মহিলা লীগ। ২০০৪ সালের ১৫ মার্চ সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্বে আসেন নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক হোন অধ্যাপিকা অপু উকিল। দলের পরবর্তী সম্মেলনের বিষয়ে নাজমা আক্তার বলেন, সম্মেলনের কোনো খবর নেই। আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পরে হতে পারে।
সম্মেলন বিলম্বিত হওয়ার কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, হাইকমান্ড নির্দেশ দিলে সম্মেলন হবে। হাইকমান্ড নির্দেশ দিলে যেকোনো সংগঠনই সম্মেলন করতে বাধ্য। নতুন সংগঠন, কর্মী তৈরি, শাখা তৈরিসহ সবকিছুই নতুনভাবে করতে হচ্ছে আমাদের। অন্য সংগঠনগুলোর মতো আমরা ‘সেটআপ’ না।
নাজমা আক্তার বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলন তো সামনেই, সেখানে হয়তো আমাদের কাউকে কো-আপ করা হতে পারে। এরপরই হয়তো সম্মেলন করতে বলা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দল ক্ষমতায় থাকায় সহযোগী সংগঠনগুলোর অনেক নেতা চাকরি, ব্যবসা, তদবির নিয়ে আখের গোছাতে ব্যস্ত। এ কারণে সংগঠনগুলো স্থবির হয়ে পড়ছে। ফলে এসব সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও নেতাদের উপস্থিতি তেমন দেখা যায় না। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ কোন্দল যোগ হওয়ায় নেতাকর্মীদের রয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি