সতর্কাবস্থায় পুলিশ
মবিনুর রহমান : বন্দুকের ট্রিগারে রাখা হাত, মাথায় হেলমেট, পরনে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট । যেকোনো সময় চালাতে হতে পারে গুলি। এমন দৃশ্য ছিল রাজধানীর বিভিন্ন মোড় ও চেকপোস্টগুলোতে। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ও শপিং মলগুলো জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় বেশ কয়েকদিন ধরে সতর্ক অবস্থায় ছিল আইশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
জানা গেছে, ২০ জুলাই রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কসহ বিভিন্ন শপিংমলে হামলার হুমকি দিয়েছিল জঙ্গিরা। হুমকির পর থেকে পুরো রাজধানীতে সতর্ক অবস্থায় ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বসানো হয় তল্লাশি চৌকি। সন্দেহভাজন গাড়ি ও ব্যক্তিদের তল্লাশি করতে দেখা যায়। বড় বড় মার্কেটগুলোতে তল্লাশির মাধ্যমে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকায় বিশেষ সতর্ক অবস্থায় ছিল পুলিশ। মার্কেটটির আশপাশে পোশাকে ও সাদা পোশাকে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। একই অবস্থা ছিল গুলশান, বনানী, তেজগাঁও, মিরপুর, পুরান ঢাকা, ধানম-ি ও কলাবাগান এলাকায়।
ভাটারা থানার ওসি নুরুল মুত্তাকিন জানান, যমুনা ফিউচারকে হুমকি দেওয়ার পর থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। মার্কেটে প্রবেশ পথগুলোতে তল্লাশি চৌকি বসানো হয়।
হামলার আশঙ্কায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা জোরদার করেছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু গতকাল বুধবার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ছিল চোখে পড়ার মত।
সরেজমিনে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে ঘুরে দেখা গেল, কলাবাগানে পথের মাঝে এসে পুলিশ অস্ত্র তাক করে দাঁড়িয়ে আছে।
ঠিক এমনি দৃশ্য চোখে পড়েছে রাজধানীর বিভিন্ন মোড় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ মার্কেটগুলোর আশপাশে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি দুটি বড় জঙ্গি হামলার পর রাজধানীসহ দেশব্যাপী নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ মোতাবেক মন্ত্রিপাড়ার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। প্রতিটি সড়কেই চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এগুলোতে হালকা যানবাহনের পাশাপাশি পথচারীদেরও গতিরোধ করে দেহ তল্লাশি করা হচ্ছে। এছাড়া কূটনৈতিক জোন খ্যাত গুলশান-বারিধারা-বনানীসহ আশপাশের এলাকার নিরাপত্তায় পুলিশের তিনটি বিভাগের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা পৃথকভাবে কাজ করছে। বাড়তি সতর্কতা হিসাবে তল্লাশি চৌকিতে যুক্ত করা হয়েছে ভেহিক্যাল মিরর ও বডি স্ক্যানার। তল্লাশি থেকে মন্ত্রীর গাড়িও বাদ দেওয়া হচ্ছে না। মিন্টু রোডের পূর্বপাশে পুলিশের চেকপোস্টে যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। সাধারণ যানবাহনগুলো ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন ও সংশ্লিষ্ট মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। অন্য সড়ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসীরা ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যা করে। এর এক সপ্তাহের মাথায় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জমায়েতের কাছে জঙ্গি হামলায় দুই পুলিশ সদস্য নিহত হয়। নজিরবিহীন ওই হামলার প্রেক্ষাপটে গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসীরা দেশে আরও হামলার পরিকল্পনা করছে জানিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি