জঙ্গিদের প্রতিরোধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে বলেছেন বাম নেতারা
রফিক আহমেদ : দেশের বিভিন্ন বাম দলগুলোর নেতারা বলেছেন, রাজধানীর গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলার পর আমাদের সকলকে জঙ্গি প্রতিরোধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। গতকাল বুধবার বিভিন্ন বাম দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা এ মন্তব্য করেন।
বাম দলের নেতারা বলেন, গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলায় দেশজুড়ে বইছে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়। প্রতিদিনই জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস প্রতিরোধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বানে জাতীয় প্রেসক্লাব, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও শাহবাগে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন ও সমাবেশ করছে। জেলা ও মহানগর, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডে, পাড়া-মহল্লা একই উদ্দেশ্যে ভিন্ন ভিন্ন ফরম্যাটে দেশজুড়ে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবিরোধী প্রতিবাদ সভা করার জন্য তৃণমূল নেতাদের নির্দেশ দিচ্ছেন বাম দলের নেতারা।
বাম দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ মোতাবেক দেশব্যাপী ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা এবং মহানগরগুলোতে সন্ত্রাসবিরোধী আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই আন্দোলনের অন্যতম কাজ হচ্ছে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও জঙ্গি তৎপরতাকারীদের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করা এবং তাদের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বাম দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তি, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, সাংবাদিক, কৃষিবিদ, পেশাজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, শ্রমিক, কৃষক, নারী, ছাত্র, যুবক, তরুণ সমাজসহ সর্বস্তরের জনগণ ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনকে ব্যাপকভাবে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অংশগ্রহণ করানো।
বাম দলগুলোর শীর্ষ নেতারা মনে করেন, জামায়াত বিভিন্ন ছদ্মাবরণে সাম্প্রতিক সময়ে হত্যা, গুপ্তহত্যা, টার্গেট কিলিং, বিদেশি নাগরিকদের হত্যা, ধর্মীয় উপাসনাগুলোতে আক্রমণ ও বোমা হামলার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল ও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি হেয় করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসকে উসকে দিচ্ছে, নিরীহ, নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে হত্যা করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে চাচ্ছে। এই অপশক্তি দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকেও ব্যাহত করে দেশে সন্ত্রাসবাদ কায়েম করতে চাচ্ছে। এরা পবিত্র ধর্ম ইসলাম ও মানবতার শত্রু, দেশের গণতন্ত্র উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার শত্রু।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ বলেন, তৃণমূল নেতাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে-সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ব্যাপারে যেন সতর্ক থাকে। তাছাড়া কারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি দেশে ইউনিয়ন, উপজেলা বা থানা থেকে জেলা শহরের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাস প্রতিরোধ আন্দোলন করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান জানান, ইসলাম কখনও জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না। ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম, এ ধর্ম অন্য ধর্মের মানুষকে আর্দশের পথে চলার দিক-নির্দেশনা শিখিয়েছে। সুতরাং যারা ইসলামের নামে মানুষ হত্যা করছে-তারা ইসলাম ধর্মের লোক হতে পারে না। এরা বিধর্মী বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ইসলাম হচ্ছে পবিত্র ধর্ম। তিনি জঙ্গিবাদী হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অতীতে জেএমবি-বাংলা ভাইকেও তৎকালীন সরকারই প্রতিষ্ঠা করেছিল। গুলশান হামলা সম্পর্কে তথ্য পূর্বেই সরকার জানত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, তথ্য জানা সত্ত্বেও মানুষকে বাঁচাতে পারলেন না কেন? তিনি মৌলবাদী জামায়াত-শিবিরসহ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান। সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি