গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার জের জাইকার ৮০ স্বেচ্ছাসেবক বাংলাদেশ ছেড়েছেন
রিকু আমির : জাপান কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ৮০ জনেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন। গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলায় সাতজন জাপানি নিহত হওয়ার ঘটনাই এর মূল কারণ বলে জাইকা সূত্রে জানা গেছে। এ সাতজনের মধ্যে কয়েকজন জাইকার বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত ছিলেন বাংলাদেশে।
সূত্রে জানা গেছে, গুলশানের ঘটনার পূর্বেও রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও হত্যার পরও নিজেদের কর্মীদের মাঠ পর্যায় থেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছিল জাইকা। সেসময় জাপানে ফেরৎ পাঠানো হয়েছিল প্রায় ৫০জন স্বেচ্ছাসেবককে। কিন্তু গুলশানের ঘটনায় একসঙ্গে সাত জাপানি নিহতের ঘটনায় বেশ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে জাইকা।
সূত্র আরও জানায়, গুলশান ঘটনার পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। বাংলাদেশে বসবাসরত জাপানি নাগরিকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা বলেছিলেন শেখ হাসিনা। বাস্তবে গুলশানস্থ জাইকার মূল কার্যালয়সহ বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যালয়কে নিরাপত্তা দিতে পারবে। কিন্তু শহর থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত জাইকার যেসব স্বেচ্ছাসেবক দিনরাত সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে কাজ করে, সেসব স্বেচ্ছাসেবককে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রদান করা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয় বলে আঁচ করতে পেরেছে জাইকা। এ আঁচ থেকেই মূলতঃ জাইকা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কর্মরত প্রায় ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবকে এরই মধ্যে জাপান ফেরৎ পাঠিয়েছে। পাশাপাশি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটি।
নাম না প্রকাশের শর্তে জাইকার দুটি সূত্র এ প্রতিবেদককে জানিয়েছে, বর্তমানে জাইকার স্বেচ্ছাসেবকভিত্তিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশে। যদিও বিভিন্ন প্রকল্প কার্যালয়গুলো একদম গুটিয়ে নেয়া হয়নি। কার্যালয়গুলো স্বাভাবিক নিয়মেই খোলা-বন্ধ করা হলেও কার্যক্রম অনেক নেতিয়ে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব কার্যালয়ে এক-দুজন কর্মকর্তা পর্যায়ের জাপানি নাগরিক ও তাদের সহযোগী কিছু বাংলাদেশী ছাড়া আর কেউ নেই।
স্বাধীনতার পর থেকে জাইকা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, নগরায়ন, পরিবহন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, দুর্যোগ এবং গ্রামীণ উন্নয়ন বিষয়ে সরকারের সহযোগী হিসাবে কাজ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আরও বেড়েছে জাইকার।
ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে বিদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অন্যতম লক্ষ্য। এজন্য গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ যেসব এলাকায় বিদেশিরা বসবাস করেন, সেসব এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের পরও জাইকার স্বেচ্ছাসেবকরা কেন দেশ ছাড়ছেন- প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সেটা জাইকার নিজস্ব ব্যাপার। তবে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক এবং দায়িত্বশীল।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার আলুটারী গ্রামে দুর্বৃত্তরা গুলি করে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিওকে হত্যা করেছিল। প্রায় নয় মাস তদন্ত শেষে এ হত্যা মামলায় জেএমবির আট সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ। অভিযোগপত্রে জেএমবি সদস্য- মাসুদ রানা, ইসাহাক আলী, আবু সাইদ, লিটন মিয়া, নজরুল ইসলাম, সাদ্দাম হোসেন, শাখাওয়াত হোসেন আনসারী ও আহসান উল্লাহর নাম রয়েছে। এর মধ্যে মাসুদ রানা, ইসাহাক আলী, আবু সাইদ ও লিটন মিয়া কারাগারে আটক আছে। বাকিরা পলাতক। অন্যদিকে- গুলশানের ঘটনায় নিহত সাতজন জাপানি হলেন- তানাকা হিরোশি, ওগাসাওয়ারা, শাকাই ইউকু, কুরুসাকি নুবুহিরি, ওকামুরা মাকাতো, শিমুধুইরা রুই ও হাশিমাতো হিদেইকো। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম