ব্যবসায়ীদের প্রধানমন্ত্রী মুনাফার লোভে দেশের ক্ষতি করবেন না
দীপক চৌধুরী : মুনাফা করতে গিয়ে ‘দেশের ক্ষতি ও নিজের বিপর্যয়’ ডেকে না আনার জন্য ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল বুধবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে গভীর সমুদ্রে সম্পদ আহরণের উদ্যোগ নেবে। এই সম্পদ আহরণের উদ্যোগ না নিলে এগুলো বেহাত হয়ে যেতে পারে। আমরা যদি ৫ বছরের মধ্যে এই সম্পদ আহরণ না করি তাহলে এগুলো হাতছাড়া হওয়ার ভয় আছে। কাজেই আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে চাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশে যেমন খনিজ সম্পদ পাওয়া যাবে আবার খাদ্য সম্পদও প্রচুর আছে।
বাংলাদেশ থেকে এক সময় রপ্তানির চিংড়ির মধ্যে লোহা ঢুকিয়ে দেওয়ার উদাহরণ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করব, যেকোনো পণ্য রপ্তানি করি না কেন, গুণগত মান যেন ঠিকঠাক থাকে সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে। তিনি বলেন, সবাইকে আমার অনুরোধ, সামান্য মুনাফা করতে গিয়ে দেশের ক্ষতি করা এবং নিজের বিপর্যয় যেন টেনে না আনি, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
রপ্তানি ও অভ্যন্তরীণ বাজারÑ উভয় ক্ষেত্রেই এ বিষয়টি মনে রাখার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
দাম ‘বেশি’ নিলেও পণ্যের মান ‘খাঁটি’ রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারাই ব্যবসা করবেন, গুণগত মানটা যেন ধরে রাখেন। শেখ হাসিনা দেশের মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত করতে মৎস্য সম্পদ আহরণ ও উৎপাদনের উপরও জোর দেন। দেশের মানুষের পুষ্টির অভাব মাছ উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে ‘দূর’ করা যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশে বছরে মাছের চাহিদা রয়েছে ৪০ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৪-২০১৫ বছরে মাছের উৎপাদন বেড়ে ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার মেট্রিক টনে পৌঁছেছে। এ বছর ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার টনে পৌঁছবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা জানান, তার সরকারের সময় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে দেশে মাছের উৎপাদন বেড়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন ছাড়াও রয়েছে মুক্ত জলাশয়ে পোনামাছ অবমুক্তকরণ, জলমহালে সামাজিক ভিত্তিতে মাছ চাষ ব্যবস্থাপনা, মাছের আবাসস্থল উন্নয়ন, নদী ও জলাশয় খনন প্রভৃতি।
শেখ হাসিনা জানান, মা ইলিশ ও জাটকা নিধন রোধে ‘কার্যকর কর্মসূচি’ নেওয়ায় দেশে ইলিশের বার্ষিক উৎপাদন এক লাখ টন থেকে বেড়ে প্রায় চার লাখ টনে পৌঁছেছে। একইসঙ্গে বেড়েছে বড় ইলিশের সংখ্যাও। ভারত ও মিয়ানমানের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তির পর বাংলাদেশের হাতে বঙ্গোপসাগরের যে এলাকা এসেছে, সেখান থেকে মৎস্য আহরণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সমুদ্রসীমায় মৎস্য ও খনিজ সম্পদ পাওয়া যাবে জানিয়ে ‘ব্লু ইকোনমির’ উপর সরকারের গুরুত্ব দেওয়ার কথা তিনি তুলে ধরেন এবং তরুণদের কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের তেমন কোনো অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। অনেকেই বলেন, গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ করবেন কিন্তু কাউকেই আমরা ঠিক তেমন আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখছি না। অথচ যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চান তারা জানেন যে, আমরা যে অঞ্চলটা পেয়েছি সেখানে বিশাল মৎস্য ভা-ার রয়েছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল, ৪টা কোম্পানি এসেছে। যারাই আসুক আমরা তাদের দিতে চাই। কারণ, আমরা যদি ৫ বছরের মধ্যে এই সম্পদ আহরণ না করি তাহলে এগুলো হাতছাড়া হওয়ার ভয় আছে। কাজেই আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে চাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক। মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাকসুদুল হাসান খান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী গণভবনের পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন। মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। ‘জল আছে যেখানে মৎস চাষ সেখানে’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ১৯ থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত এই জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপিত হচ্ছে।