জঙ্গিবাদ : বিপথে আপনার সন্তান : কী করবেন, কী করবেন না
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এদেশ জঙ্গিবাদ মুক্ত হবেই
ড. আ ক ম আকতারুজ্জামান বসুনিয়া, এসপিবিএন-এ কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা
সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিবাদে যারা জড়িয়েছে তারা কারা? ইংরেজি মাধ্যমে পড়া উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। জঙ্গিবাদের সঙ্গে এ পর্যন্ত যাদের জড়াতে দেখেছি, তারা হয় একেবারেই নিম্নবিত্ত, কখনও মাদ্রাসার ছাত্র আবার কখনও অতি উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। মাদ্রাসা এবং ইংরেজি মিডিয়াম দুটোই সংস্কৃতি বিচ্ছিন্ন। মাদ্রাসার ছেলেটি হতে চায় আরবিয়, ইংরেজি মিডিয়ামের ছেলেটি হতে চায় ইংরেজ। ইংরেজি বাংলার মিশেলে এক অদ্ভুত ভাষায় কথা বলে। ভাত চেনে না, রাইস চেনে। এরা দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিচ্ছিন্ন। এদের কোনো নিজস্ব চিন্তাশক্তি নেই। এদেরকে খুব সহজেই যেকোনো বিপরীত স্রোতে প্রবাহিত করা সম্ভব।
মূল কাজটি শুরু করতে হবে পরিবার থেকে। কেননা পরিবার থেকেই মানুষ শিখে। অনেক পরিবার আছে, যেখানে বাবার খবর মা জানে না, মায়ের খবর বাবা জানে না। এমন সব পরিবারের সন্তানদের সঙ্গে বাবা-মায়ের যোগাযোগ কম থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সন্তানকে আপনি কতটা সময় দিচ্ছেন সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। গুড প্যারেন্টিং খুব জরুরি বিষয়। সেটা থাকলে হঠাৎ করে সন্তানের যেকোনো পরিবর্তন আপনার চোখে পড়বে। সন্তানের পছন্দ-অপছন্দ, ভালোলাগা-মন্দলাগা, বন্ধু-বান্ধব, কোথায় যায়, কি করে সবই লক্ষ্য রাখতে হবে আপনাকেই।
ধর্মীয় শিক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃত ধর্ম শিক্ষা থাকলে, ইসলামের শিক্ষা থাকলে কেউ বিপথগামী হবার কথা নয়। ইসলাম শান্তির ধর্ম, মানবতার ধর্ম। ইসলাম কখনোই সন্ত্রাসবাদকে অনুমোদন করে না। প্রকৃত ইসলামের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। জঙ্গিবাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
সরকার জঙ্গিবাদ দমনে বদ্ধ পরিকর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এদেশ জঙ্গিবাদ মুক্ত হবেইÑ এটি শুধু কথার কথা নয়, সেই লক্ষ্যে কাজও করে চলেছেন তিনি। আমরা দেশের প্রতিটি মানুষ প্রধানমন্ত্রীর জঙ্গিবাদ দমনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হব, জঙ্গিবাদ দমনে অংশ নিব, সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদ রুখে দিব, এই অঙ্গিকার হোক সকলের।
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন
সি সামথিং, সে সামথিং
রহমান শেলী, র্যাব এ কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা
সম্প্রতি যারা জঙ্গি হবার পথে এসেছে। তারা আধুনিক সমাজে বসবাস করেন। উচ্চবিত্ত পরিবারে তাদের বাস। ছেলেরা ‘হাই’, ‘হোয়াটস আপ’ জগতের। টুপি-পাঞ্জাবিওয়ালা নয়, আধুনিক পোশাকের। দেখা হলে গালে গাল লাগিয়ে ভাব বিনিময় করে। এরা ভাত চিনে না, রাইস চিনে। দাদারা হুক্কা খেলেও এরা খায় শিশা।
ভালো সবকিছুই ভালো। আধুনিক জীবনযাপন সবারই কাম্য। সারা ওয়ার্ল্ড মাতাবে আমাদের সূর্য সন্তানেরা এটা আমাদের কাম্য। নাসা থেকে শুরু করে পারমাণবিক বিদ্যুৎ। কৃষিখাতে বিপ্লব হচ্ছে এখন। শিল্পউন্নয়নে আমরা এখনও পিছিয়ে আছি। আর নয়। আমরা এবার দাঁড়াতে চাই বিশ্ব দরবারে একটি সমৃদ্ধি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে।
কিন্তু দেখছি বিপথে এগিয়ে কিছু তরুণ। ধ্বংসের পথে কিছু তরুণ। এরা ‘লস্ট জেনারেশন’। এ লস্ট জেনারেশন থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। মা-বাবাদের আধুনিক জীবনযাপনের মাঝে, শত ব্যস্ততার মাঝে সময় দিতে হবে সন্তানদের।
যাদের টাকা পয়সা নেই, তারাও এ দায় এড়াতে পারেন না। সন্তান জন্ম দেওয়ার দায়িত্ব যেমন আপনার, তাদের মানুষ করার দায়িত্বও আপনার।
লস্ট জেনারেশনের চলাফেরার গতি স্বাভাবিক নয়। তাদের জন্য বলছি, তাদের মা-বাবারা নিজেকে লুকিয়ে না রেখে সহযোগিতার আশ্রয় নিন। বিপদকে আরও না বাড়িয়ে পুলিশকে জানাতে পারেন এসব তথ্য। জানাতে পারেন র্যাবসহ পুলিশের অন্যান্য ইউনিটকেও। কেউ হারিয়ে গেলে দ্রুত থানায় জিডি করুন। গুগলসহ রাস্তাঘাটে সব জায়গায় পুলিশের নাম্বার পাওয়া যায় আজকাল। কেউ মনে করলে আমাকে ই-মেইল করতে পারেন। র্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ বিপিএম বার স্যার এ ব্যাপারে একটা কথা বলেছেন, সি সামথিং, সে সামথিং।…
আমরা স্বাধীন। পরাধীনতার নিপীড়ন নির্যাতন পিষে আমরা স্বাধীন। স্বাধীনতার স্পিরিট নিয়ে সকল তরুণের আগামী হোক। জঙ্গিবাদ নয়, হোক একটি সুন্দর সকাল।
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন
সম্ভাবনার দেশকে জঙ্গিরাষ্ট্র বানাতে দিতে পারি না
জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া, র্যাব এ কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা
কোনো মানুষ জঙ্গি হয়ে জন্মায় না। পরিবার, পরিবেশ, সমাজ, সঙ্গদোষে মগজ ধোলাই হয়ে একজন মেধাবী কিশোর বা তরুণ জঙ্গি হয়ে উঠতে পারে। যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া গুলশান ও শোলাকিয়া ট্র্যাজেডি। সারাবিশ্বকে আলোড়িত করে আমাদের এইসব তরুণেরা যে ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিল, তা সত্যিই জাতির জন্য কলঙ্ক। আমরা স্তম্ভিত, লজ্জিত, দুঃখিত।
কারা জড়িত এর পিছনে? দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা যে জড়িত তাতে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাওয়া এ বাংলাদেশ অনেকের চোখের কাঁটাÑ বুঝতে বাকি নেই। প্রতিটি বাবা মাকে বিনীত অনুরোধ করবÑ প্লিজ! প্লিজ, আপনার সন্তানকে সময় দিন, সন্তানকে বন্ধু হিসেবে গড়ে তুলুন। সন্তান কি করে, কার সঙ্গে মিশে, কোথায় যায়, কখন ঘুমায়, রাতজেগে কাদের সঙ্গে কথা বলে খোঁজখবর রাখুন। শুধু অর্থবিত্তের পেছনে ছুটে সন্তানকে বিপদের মুখে ফেলবেন না। বিপদের দিকে ঠেলে দিবেন না। মনে রাখবেন, সন্তানের বিপদ আপনার জন্য আরও বিপজ্জনক হতে পারে। সন্তান যেমন ভবিষ্যৎ কর্ণধার হতে পারে, আবার আপনার একটু অবহেলায়, এই সন্তান হয়ে উঠতে পারে জাতির কলঙ্ক। আসুন দেশকে সুখী ও সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্র করে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখি। সমাজের শিক্ষিত ও এলিটদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, সন্তানের খবর রাখুন, আন্তরিকভাবে রাখুন। পাড়া মহল্লায় তথাকথিত আলেম, শিক্ষকদের প্রতি নজর রাখুন, কারা ছাত্রদের, সাধারণ মানুষদের ধর্মের নামে উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলে। প্রয়োজনে নিকটস্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করুন। আসুন সবাই মিলে পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায়, গ্রামেগঞ্জে সর্বত্র জঙ্গিবিরোধী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলি। মিটিং, মিছিল, সভা, সেমিনারে আলোচনা করে জঙ্গিবিরোধী ডাক ছড়িয়ে দিই, যে ডাক চেতনার ডাক, একাত্তরের চেতনা, জয়বাংলার চেতনা। আমরা কোনোভাবেই এই সুন্দর, সুজলা-সুফলা, উজ্জ্বল সম্ভাবনার দেশকে জঙ্গিরাষ্ট্র বানাতে দিতে পারি না।
এখনই সময়, চারা গজানোর আগে সমুলে তুলে ফেলি, নতুবা ডালপালা ছড়িয়ে গেলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে দেশের, আমাদের।
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন