বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩ নম্বর ইউনিটের কাজ এগিয়ে চলছে
সোহেল সানী, পার্বতীপুর (দিনাজপুর) : ইতিমধ্যে ইউনিটটির ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দেশে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২৭৫ মেগাওয়াট (নিট) উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ৩ নম্বর ইউনিট স্থাপন কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। ২০১৮ সালের জুলাই মাসের মধ্যে ইউনিটটি উৎপাদনে যাওয়ার কথা। ইউনিটটি স্থাপন শেষে উৎপাদনে গেলে বড়পুকুরিয়া ২৫০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ৫২৫ মেগাওয়াটে গিয়ে দাঁড়াবে। এটি বিদ্যুৎ সেক্টরে সাফল্যের আরেক ধাপ অগ্রগতি।
এর ফলে দেশের উত্তর-পশ্চিম জোনের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণসহ লো-ভোল্টেজজনিত সমস্যা কমে আসবে। এদিকে ৩ নম্বর ইউনিট নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় প্রত্যক্ষভাবে এলাকার প্রায় ১ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং পরোক্ষভাবে আরো ৫ হাজার লোক উপকৃত হচ্ছে বলে সংশিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে আহরিত কয়লা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে খনি মুখে ২৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট রয়েছে। এর পাশেই ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩ নম্বর ইউনিট স্থাপন করা হচ্ছে। ৩ নম্বর ইউনিটটি চালু রাখতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ হাজার টন হিসেবে বছরে প্রায় ৭ লাখ টন কয়লার প্রয়োজন হবে। সূত্র মতে, ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩ নম্বর ইউনিটটি বাস্তবায়ন করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জয়েন্ট ভেঞ্চার অব হারবিন ইলেকট্রিক ইন্টারন্যাশনাল ও সিসিসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত বছরের জুলাই মাস থেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শুরু করে।
সরজমিন প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল ভবনের (বয়লার ও মেশিন হাউস) সংলগ্ন উত্তর পাশে ৩ নম্বর ইউনিটের বয়লার, টারবাইন, চিমনি নির্মাণের পাইলিংসহ সিভিল ওয়ার্ক প্রায় শেষ পর্যায়ে। মেইন ভবন ও বয়লার হাউসের স্টিল স্ট্রাকচার ও ২২০ মিটার চিমনি নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ পুরোদমে চলছে। বৃষ্টির মধ্যে ভিজে চীনা প্রকৌশলী, বিউবোর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দেশি শ্রমিকরা যে যার কাজে ব্যস্ত।
এব্যাপারে বাস্তবায়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী চৌধুরী নুরুজ্জামান বলেন, চলতি জুলাই মাসের মধ্যে ৩০ শতাংশ কাজের টার্গেটের বিপরীতে ৪০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ১ হাজার দেশি শ্রমিক, প্রায় ২৫০ জন চীনা প্রকৌশলী ও বিউবোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দিনরাত কাজ করায় তা সম্ভব হয়েছে। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ৯০ শতাংশ যন্ত্রপাতিও প্রকল্প এলাকায় চলে এসেছে। অবশিষ্ট ১০ শতাংশ যন্ত্রপাতি আগামী মাসে প্রকল্প এলাকায় চলে আসবে। ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে ইউনিটটি উৎপাদনে যাওয়ার কথা থাকলেও যে গতিতে কাজ চলছে তাতে করে নির্ধারিত সময়ের অন্তত ৪ মাস আগেই প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে ইউনিটটি উৎপাদনে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পিডি আরো বলেন, তৃতীয় ইউনিটটি উৎপাদনে গেলে দেশের উত্তর-পশ্চিম জোনের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ হবে এবং লো-ভোল্টেজ জনিত সমস্যা কমে আসবে। এ ছাড়া এখানকার বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়ে ট্রান্সমিশন লস কমাবে। ৩ নম্বর ইউনিটটি চালু রাখতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ হাজার টন হিসেবে বছরে প্রায় ৭ লাখ টন কয়লার প্রয়োজন হবে। এতে করে বড়পুকুরিয়া খনির কয়লার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে বলে তিনি মনে করেন।
উল্লেখ্য, দরপত্রদাতার ঋণের (বায়ারস ক্রেডিট) আওতায় চীনের জয়েন্ট ভেঞ্চার অব হারবিন ইলেকট্রিক ইন্টারন্যাশনাল ও সিসিসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩ নম্বর ইউনিটটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা ও ৮৫২ কোটি টাকা দেশীয় মুদ্রা রয়েছে। এতে প্রতি কিলোওয়াটে স্থাপন ব্যয় হবে প্রায় ১ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পিডিবির চুক্তি স্বাক্ষর হয় ২০১৩ সালের ৪ জুলাই। চুক্তি কার্যকর হয় ২০১৫ সালের ১৫ জুলাই এবং চুক্তি কার্যকরের পর পরই প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়। চুক্তি কার্যকরের দিন থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ৩ বছর ধরা হয়েছে।