ভারী বর্ষণে পানিবন্দি সিরাজগঞ্জের হাজারো মানুষ
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : উজান থেকে পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিরাজগঞ্জ জেলার চরাঞ্চলের ২৪টি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামই বন্যায় নিমজ্জিত হয়ে মানুষগুলো দুর্বিসহ অবস্থায় পড়েছে। অপরদিকে, পানি বাড়ার সাথে সাথে চৌহালীর এনায়েতপুরে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পানি বাড়ার সাথে জেলার ৮৩টি ইউনিয়নের মধ্যে মধ্য যমুনায় চরাঞ্চলে অবস্থিত ২৪টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। ফসলী জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। বসতবাড়ি ও বাড়ির চারপাশে পানি ওঠায় মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকট। অধিকাংশ স্কুলগুলোতে পানি ওঠায় ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা বিঘœ ঘটছে। কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে যাতায়াতে কষ্ট হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি বাড়ি থেকে নৌকাযোগে ছাত্র-ছাত্রীদের এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় যেতে হচ্ছে।
সয়াশেখা স্কুলের ৫ম শ্রেণির সুমন জানান, বড় কয়ড়া থেকে সয়াশেখা নৌকাযোগে স্কুলে আসতে হয়েছে। অনেক সময় বৃষ্টি নামলে বই খাতা ভিজে যায়। তারপরেও কষ্ট করে স্কুল এসেছি। এছাড়াও পানি বাড়ার সাথে সাথে চৌহালীর উপজেলার এনায়েতপুরে নদীর তীরবর্তী বামন গ্রামে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিনের প্রায় শতাধিক বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
কাওয়াকোলা ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম জানান, ৭নং ওয়ার্ডে বর্নি, বড় কয়ড়া ও ছোট কয়ড়া তিনটি গ্রামই বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যাতায়াত অসাধ্য হয়ে পড়েছে। দরিদ্র এসব মানুষের নৌকায় নেই। এমতাবস্থায় মানুষগুলো দুর্বিসহভাবে জীবনযাপন করছে।
কাওয়াকোলা ইউপি চেয়ারম্যান টি.এম. শাহাদত হোসেন, ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামই বন্যায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।
নৌকা ছাড়া কেউ ঘর হতে বের হতে পারে না। সকল রাস্তাঘাট-ফসলী জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষকরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। দিনমজুর মানুষগুলোর চরম দুরাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এখনও সরকারি সহায়তা পাওয়া যায়নি। উপজেলা পরিষদের নির্দেশনা অনুযায়ী তালিকা তৈরির কাজ চলছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহজাহান আলী জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কাওয়াকোলা ইউনিয়ন পরিদর্শন করা হয়েছে। এতে এ ইউপির ৮০ ভাগ মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানকে তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তালিকা জমা দেবার পরই সরকারী সহায়তা প্রদান করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান ইমাম জানান, গত ১২ ঘণ্টায় ৫ সে.মি পানি বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ১২.৯৬ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখনও বিপদসীমার ৪১ সে.মি. নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।