দেশে যশোরের ৫ জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে
যশোর প্রতিনিধি : যশোরের বিভিন্ন স্থান থেকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে নিশ্চিত হয়েছে যশোরের পুলিশ। এই পাঁচজনের মধ্যে অবশ্য এমএম কলেজের শিক্ষক নাইমা আক্তারের নাম নেই। পুলিশের বিশেষ শাখা নিখোঁজ ব্যক্তি ছাড়াও সন্দেহভাজনদের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে যাচাই-বাছাই শেষে বুধবার রাতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসেন।
সম্প্রতি র্যাবের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিখোঁজদের তালিকায় যশোরের মণিরামপুরের ১৪ জনের নাম রয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে নিশ্চিত হয়েছে, এরা জঙ্গি নন, কাজের সন্ধানে সমুদ্রপথে বিদেশ গিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে যশোরের ৯টি থানায় মোট ১১৪টি সাধারণ ডায়রি হয় সন্তান বা স্বজনদের নিখোঁজের বিষয়ে। দেশে জঙ্গি তৎপরতা বাড়ার প্রেক্ষাপটে পুলিশ এই সাধারণ ডায়রিগুলো বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে। পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, এদের অনেকে পরিবার-সদস্যদের সঙ্গে রাগারাগি করে বাড়ি ছেড়েছেন। আবার অনেকে গোপনে বিয়ে করে পরিবার ত্যাগ করেছেন। কেউ কেউ বিদেশেও পাড়ি জমিয়েছেন কাজের আশায়।
যশোরে নিখোঁজের ব্যাপারে সাধারণ ডায়রি হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। এরা হলেনÑ যশোর শহরের শংকরপুর গোলপাতা মসজিদ এলাকার সোবহানের ছেলে কামরুজ্জামান তুহিন ওরফে মুন্না (২৪), শহরতলীর কিসমত নওয়াপাড়া এলাকার কাজী হাবিবুল্লাহর ছেলে ফজলে রাব্বি (২১) এবং শার্শা উপজেলার শ্যামলাগাছি গ্রামের আওরঙ্গজেবের ছেলে মেহেদি হাসান জিম (১৯)।
এদের মধ্যে ফজলে রাব্বি মাগুরা সদর উপজেলার বাসিন্দা হলেও বর্তমান ঠিকানা যশোরের কিসমত নওয়াপাড়া। অন্য দুই ‘জঙ্গি’ হলেন শহরের ধর্মতলা মোড় এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে রায়হান (২১) ও মণিরামপুর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের মৃত হাসান আলী গাজীর ছেলে জিএম নাজিমউদ্দিন ওরফে নকশা নাজিম (৪২)।
পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, ধর্মতলা এলাকার রায়হান হিজবুত তাহরীরের কেন্দ্রীয় নেতা। তার বিরুদ্ধে ঢাকার বিভিন্ন থানায় মামলা আছে। প্রায় তিন বছর তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। আর মণিরামপুরের নাজিমউদ্দিন নিখোঁজের ব্যাপারে রাজধানীর ভাটারা থানায় সাধারণ ডায়রি হয়।
এদিকে, স¤প্রতি র্যাব তাদের ওয়েবসাইটে যে নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করে, তার মধ্যে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ১৪ জনের নাম রয়েছে। এরা হলেনÑ মশ্মিমনগর ইউনিয়নের আমানুল্লাহ, কামরুজ্জামান, কামাল হোসেন, সারাত আলী, চাকলা গ্রামের হাসানুর রহমান, মল্লিকপুরের ইকবাল হোসেন, কিসমত চাকলা গ্রামের হাসান আলী, ফারুক হোসেন, সুমন হোসেন এবং ঝাঁপা ইউনিয়নের খালিয়া গ্রামের তৌহিদুল ইসলাম, পীর বক্স, তপন ও শাহ আলম এবং শৈলগ্রামের মাসুুদুর রহমান।
কর্মকর্তারা খোঁজখবর নিয়ে জানতে পেরেছেন, মশ্মিমনগর এবং ঝাঁপা ইউনিয়নের এসব ব্যক্তি কাজের আশায় সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া বা অন্য কোনো দেশে পাড়ি দেন। এদের অনেকে ফিরেও এসেছেন। আবার অনেকের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ হয়েছে।
জানতে চাইলে যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, পাঁচ ‘জঙ্গির’ পরিবারের সঙ্গে ইতোমধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা ভুল পথ থেকে ফিরে এলে সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আইনগত সহায়তা দেওয়া হবে। প্রয়োজনে সুপথে ফেরার জন্য তাদের কাউন্সেলিং করা হবে। এখন পর্যন্ত কামরুজ্জামান এবং ফজলে রাব্বির পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ওই দুই তরুণের বাবা-মা পুলিশকে জানিয়েছেন, তারা সন্তানদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। অন্য তিনজনের পরিবারকে মেসেজ দেওয়া হলেও কোনো রেসপন্স পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, যশোর এমএম কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক নাইমা আক্তার সপরিবারে দেশ ছেড়েছেন। তারা মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় রয়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা। বাংলাদেশ থেকে সপরিবারে আইএসে যোগ দেওয়ার তথ্য এটিই প্রথম। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা