বাংলাদেশ-ভারত স্বরাষ্ট্র পর্যায়ে বৈঠকের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন
আনিসুর রহমান তপন : ২৭ থেকে ৩০ জুলাই নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ-ভারত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের আলোচ্যসূচির প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। বৈঠকে ভারতে অবস্থানরত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও সন্দেহভাজন জঙ্গি হস্তান্তরসহ জঙ্গি দমন ও এসব জঙ্গির গতিবিধি সম্পর্কে আগাম তথ্য সরবরাহের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
তবে, সম্প্রতি ১ জুলাই গুলশানে স্পেনিশ রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলা ও এর পরপরই ঈদুল ফিতরের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় আরেকটি জঙ্গি হামলার ঘটনায় সতর্ক হয়ে উঠে বাংলাদেশের সরকার ও প্রশাসন। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত বা জঙ্গি হামলার পরিকল্পনাকারীদের প্রতিরোধ ও গ্রেফতারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরে সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে এ বিষয়টি। আলোচনায় সন্ত্রাস রোধে সহযোগিতা ও অপরাধী বিনিময় বিষয়ে আলোচনা হবে সেখানে। এছাড়া দু’দেশের কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের অবাধে সীমান্ত পারাপার মোকাবিলায় সীমান্তে পরস্পরকে কিভাবে সহযোগিতা করা যায় সে বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হবে। তবে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের গতিবিধি ও জঙ্গি হামলার বিষয়ে আগাম তথ্য বিনিময়ে বিশেষভাবে জোর দিবে বাংলাদেশ। তাছাড়া সীমান্ত এলাকায় অপরাধ দমন ও অপরাধী গ্রেফতারে যৌথ অভিযান পরিচালনার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে।
এদিকে, সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেয়েছে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরের ঠিক আগে এ চুক্তি মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হওয়ায় ২০১৩ সালে ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত ‘বন্দি বিনিময় চুক্তি’র ১০ এর ৩ ধারাটি সংশোধনে দুদেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
গত ১৮ জুলাই মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্দি বিনিময় চুক্তির সংশোধনী মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হওয়ায় এখন থেকে আদালতের ওয়ারেন্ট জারি হলেই দু’দেশের মধ্যে বন্দি বিনিময় করা যাবে।
সচিব বলেন, এর আগে শুধু ওয়ারেন্ট থাকলেই বন্দি বিনিময় করা যেত না। ‘ট্রিটি বিটুইন দ্য রিপাবলিক অব বাংলাদেশ অ্যান্ড রিপাবলিক অব ইন্ডিয়া রিলেটিং টু এক্সট্রাডিশন’ চুক্তিতে অপরাধের প্রমাণ ও আদালতের নির্দেশ থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। মূলত এটা ছিল জটিল প্রক্রিয়া। তাই এবার সংশোধনীর মাধ্যমে চুক্তির এ ধারাকে সহজ করা হয়েছে। চুক্তির এ ধারা সহজ করতে এর আগে ভারত সরকার বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়ে ছিল। মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ভারতে বসবাসকারী কোনো বাংলাদেশীর বিরুদ্ধে যদি বাংলাদেশের আদালত ওয়ারেন্ট জারি করে তাহলে ভারত সরকার সেই আসামিকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে। একইভাবে ভারতের ওয়ারেন্টভুক্ত কোনো আসামিকে ফেরৎ চাইলে বাংলাদেশ সরকার তাকে হস্তান্তর করবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এর আগে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীর ভারত সফর করেন। পাশাপাশি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি. চিদাম্বরম ও সুশীল কুমার সিন্ধে বাংলাদেশ সফর করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ভারতের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এটি হবে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ৫ম বৈঠক।
এদিকে, সম্প্রতি সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) আবু হেনা মো. রহমাতুল মূনিম।
বৈঠকে ইপ্লিমেন্টেশন অব দি এলবিএ ১৯৭৪ এবং প্রটোকল ২০১১ চুক্তির বিষয়ে সর্বশেষ বিষয়ে আলোচনা হয়। কাউন্টার টেরোরিজম এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে সর্বশেষ অবস্থা জানাতে বলা হয়েছে বৈঠকে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কি পরিমাণ বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা করেছে তারও বিস্তারিত তথ্য জানতে চায় বৈঠকে। সভা থেকে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিজিবি)কে বলা হয়েছে, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা (সিবিএমপি)’র উন্নয়নে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ভারত থেকে বর্তমানে কি পরিমাণ মাদক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং সেটি গত বছরের থেকে বেশি বা কম কি পরিমাণ সেটা জানাতে হবে। তাছাড়া জাল নোট প্রচলন প্রতিরোধে উভয় দেশের টাস্কফোর্সের অগ্রগতি কি সেটাও জানতে চাওয়া হয়।
এছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভিসা জটিলতা নিরসন, সীমান্ত ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, চোরাচালান প্রতিরোধ, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মানব পাচার, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান, সীমানা নির্ধারণ সমস্যা, সীমান্তে হত্যাকা- বন্ধে, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের বিষয়ে কি কি অগ্রগতি হয়েছে সেসব বিষয় নিয়েও আলোচনা হবে বলে প্রস্তুতি মূলক বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি