‘অভিভাবকদের অবহেলায় তরুণ যুবকরা উচ্ছন্নে যাচ্ছে’
আজাদ হোসেন সুমন : অভিভাবকদের তদারকির অভাবে ঐশী, নিবরাস ইসলাম, রোহান ইমতিয়াজ মোবাশ্বের, খালেকুজ্জামানের মত শত তরুণ যুবক উচ্ছন্নে যাচ্ছে। সম্প্রতি রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আয়োজিত স্মরণসভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘ড্রাগ যেমন একটা সময় তরুণ সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করত, আজ তেমনিভাবে জঙ্গিবাদও তরুণদের নিয়ন্ত্রণ করছে। সন্তান কি ভাবছে, কোথায় যাচ্ছে কাদের সাথে মিশছে। এসবই অভিভাবকদের আপডেট থাকার সময় এসেছে। অনেক তরুণ আজ বিপথে পা বাড়াচ্ছে। তাদের কেউ নাম লেখাচ্ছে উগ্রবাদে, কেউ বা হাতে তুলে নিচ্ছে মাদক। ২০১১ সালের অক্টোবরে পুরান ঢাকার নরেন্দ্রনাথ বসাক লেনে মাদকাসক্ত সন্তান জাহিদুল ইসলাম খুন করে তার বাবা মনসুর আলীকে। এরপর ব্যবসায়ী মনসুর আলীর লাশ তার নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাটির নিচে পুঁতে রাখে জাহিদুল।
২০১৩ সালের ১৭ আগস্ট রাজধানীর চামেলীবাগের বাসায় বাবা এসবির পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমানকে সস্ত্রীক হত্যা করে তাদেরই ‘ও’ লেভেলপড়ুয়া মেয়ে ঐশী রহমান। ঐশী এখন জেলহাজতে। ঐশী ইয়াবায় আসক্ত ছিল। মা-বাবার আদরে বেড়ে উঠা ওই কিশোরী কিভাবে মাদকে আসক্ত হল টের পাওয়ার আগেই সব শেষ।
২০১২ সালের ১৪ মার্চ অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামানের বড় ছেলে এ টি এম কামরুজ্জামানকে খুন করেন তার ছোট ভাই এ টি এম খালেকুজ্জামান। খালেকুজ্জামানও মাদকাসক্ত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের নেতা এস এম ইমতিয়াজ খান বাবুলের ছেলে রোহান ইমতিয়াজ বাড়ি ছেড়েছিল গত ৩১ ডিসেম্বর। ছয় মাস পার হলেও তার কোনো হদিস বের করতে পারেনি পরিবার। শেষ পর্যন্ত রোহানকে পাওয়া গেল, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারীদের একজন ছিল সে।
মীর হায়াত কবিরের ছেলে মীর সামিহ মোবাশ্বেরেও ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিল সে। গুলশান থানায় জিডি করেছিলেন বাবা। পরে জানা গেল, রোহানের সঙ্গে মোবাশ্বেরও আর্টিজান বেকারিতে হামলায় অংশ নিয়েছে।
পরিবারের অলক্ষে বিপথগামী তরুণ-তরুণীরা একদিকে যেমন উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়ছে, তেমনি মাদকের ভয়াল থাবায় ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। তাই উগ্রবাদ ও মাদকের ছোবল থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় পরিবারকেই সবার আগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিঃসঙ্গতা ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার কারণেই জঙ্গিবাদ ও মাদকের পথে পা বাড়াচ্ছে তরুণ-তরুণীরা।
এ বিষয়ে মনোচিকিৎসক ডা: মোহিত কামাল বলেছেন, একটি সন্তান হুট করে মাদকাসক্ত হয়ে উঠে না। এর পেছনে তার বন্ধু-বান্ধব বড় ভূমিকা পালন করে। মাদকাসক্ত হয়ে পড়ায় তরুণ-তরুণীরা শুধু বিপথেই যাচ্ছে না, নৃশংস সব ঘটনা ঘটাচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য মা-বাবাকে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। সন্তানের ভেতরে আত্মসম্মান বোধ জাগাতে হবে। আশাবাদী করে গড়ে তুলতে হবে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম