বানের পানিতে চরম বিপাকে নিম্নœাঞ্চলের বাসিন্দারা
আনাস ভূঁইয়া : টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের বিভিন্ন নদী প্লাবিত হয়েছে। এতে দেশের নিম্নাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সুনামগঞ্জ : খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার সাত উপজেলা দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, দিরাই শাল্লা ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগে বিঘœ ঘটছে। পানি বাড়ায় দোয়ারাবাজার উপজেলার খাসিয়ামারা নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে মহব্বতপুর বাজার এলাকা হাঁটু পানিতে ডুবে গেছে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলায় রাস্তায় পানি উঠে গেছে। এতে সুনামগঞ্জ সদরের সঙ্গে তাহিরপুরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নদীর পানি বাড়ছে। আমরা প্রস্তুত আছি, কোথাও কিছু হলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
বুধবার সকাল ১০টায় সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্ট দিয়ে বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সুরমা নদীর পানি। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৮ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার অতিক্রম করে ৮ দশমিক ৭৭ সেন্টিমিটার (৫২ সেন্টিমিটার উপর) দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ: যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সিরাজগঞ্জের ৫ উপজেলার চরাঞ্চলের ২৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
গত ২৮ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যুমনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই জেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হচ্ছে। অপরদিকে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুরে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে।
চরাঞ্চলের বন্যাকবলিত এসব ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাজিপুর উপজেলার ৯টি, সদর উপজেলার ৫টি, বেলকুচির ৩টি, চৌহালীর ৭টি ও শাহজাদপুরের ৩টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৫ শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে এসব অঞ্চলের শত শত একর ফসলি জমি।
সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন ঠান্ডু জানান, এ ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামের মধ্যে প্রায় সবগুলোতেই পানি ঢুকেছে। এতে প্রায় ২৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নৌকা ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। দুর্ভোগে পড়েছেন দিনমজুর মানুষগুলো। তবে এখনও সরকারি সহায়তা পাওয়া যায়নি।
কাজিপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আব্দুল হালিম জানান, এ উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন পুরোপুরি ও ৩টি ইউনিয়ন আংশিক চরাঞ্চল। এ কারণে যমুনার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রতিনিয়তই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম।
চৌহালী ইউএনও রেজাউল বারী জানান, যমুনায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ উপজেলার এনায়েতপুরে নদীর তীরবর্তী বামন গ্রামে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। গত ৪/৫ দিনের ব্যবধানে প্রায় অর্ধশতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায়ই বন্যার পানি ঢুকেছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান ইমাম বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, বন্যা দুর্গতদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ মজুদ রয়েছে। ইতোমধ্যে শাহজাদপুরে ৫ মেট্রিক টন চাল ও ৮০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। কাজিপুরে ১০ মেট্রিক টন চাল ও ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোতেও ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।