জানুয়ারিতে জামায়াতের নতুন আমির!
ডেস্ক রিপোর্ট : প্রায় ১৫ বছর পর কেন্দ্রীয় আমির নির্বাচনে যাচ্ছে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দল জামায়াতে ইসলামী। আগামী ৭ দিনের মধ্যে আমির নির্বাচনে তিনজনের একটি প্যানেল বাছাই করে এক মাসের মধ্যে আমির নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এরপর আগামী জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আমিরে জামায়াতের নাম ঘোষণা করবে দলটি।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সঙ্গে সেক্রেটারি জেনারেলের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় জামায়াত। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ, মজলিসে শূরা ও কেন্দ্রীয় শীর্ষনেতাদের সহচরদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে গোলাম আযমের উত্তরসূরী হিসেবে নিজামী জামায়াতে ইসলামীর আমির হিসেবে দায়িত্ব পান। এর তিন বছর পর ফের আমির হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। ২০১০ সালের ২৯ জুন একটি মামলায় মতিউর রহমান নিজামী গ্রেফতার হওয়ার পর নায়েবে আমির মকবুল আহমাদ ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পান। ২০১১ সালের জুনে তার আমিরের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। চলতি বছর আমির নির্বাচন সম্পন্ন হলে প্রায় ছয়বছর পর নির্বাচিত আমির পাবে জামায়াত।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার দায়িত্বশীল সদস্য জানান, সাম্প্রতিক বৈঠকের পর থেকে আমির নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। প্রথমে গঠনতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী সারাদেশে ৩৭ হাজার রুকনের (শপথগ্রহণকারী) মধ্য থেকে পরামর্শ করে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা তিনজনের একটি প্যানেল নির্বাচন করবে। তবে আমির নির্বাচনের ক্ষেত্রে রুকনরা প্যানেলের বাইরে থেকে রুকনদের মধ্য থেকেও ভোট দিতে পারবেন। জামায়াতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেতা হওয়ার নিয়ম নেই বলে রুকনদের ভোট থেকে প্যানেল হবে।
শূরা সূত্র জানায়, আগামী ৭ দিনের মধ্যে মজলিসে শূরা ( সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৮৫) পরামর্শক্রমে তিনজনের প্যানেল নির্বাচন করবে। এরপর এক মাসের মধ্যে সারাদেশের রুকন-ভোটাররা ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিয়ে আমির নির্বাচন করবেন।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ও মজলিসে শূরার দুজন সদস্য জানান, আমিরের প্যানেলে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ, নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ও যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এগিয়ে আছেন। তবে মকবুল আহমাদের বার্ধক্য, অসুস্থতার কারণে সবশেষে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও সাঈদীর মধ্যে লড়াই চলবে।
জামায়াতের গঠনতন্ত্র থেকে জানা যায়, দলটির আমির নির্বাচনের সময়সীমা তিন বছর। তবে গত বছরের জুনে দলের মুদ্রিত গঠনতন্ত্রের ৫৯তম সংস্করণের ধারা ১৫-এর ৬-এর (ঘ) উপ-ধারায় বলা হয়েছে, ‘কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের বিবেচনায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জামায়াতের আমির নির্বাচন অনুষ্ঠান যদি কিছুতেই সম্ভব না হয়, তা হলে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত আমির কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অনুমোদন সাপেক্ষে নিজ পদে বহাল থাকবেন।’
জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, হতে পারে, প্যানেল নির্বাচন হয়ে যেতে পারে। এটা তো বেশি সময়ের কাজ না।
সাঈদীর নির্বাচিত হওয়ার প্রসঙ্গে মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, এটা তো বলা মুশকিল। কারণ, রুকনরা প্যানেল থেকে ভোট দেবেন। আবার প্যানেলের বাইরে থেকেও দিতে পারেন। ফলে কে হবেন এটা ভোট শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না।
তবে কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের দায়িত্বশীলদের ফোন নম্বর বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। এর বাইরে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের দুই ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার তিনজনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হলেও তারা নিজ পরিচয় উদ্ধৃত করতে রাজি হননি। তাদের ভাষ্য, কেন্দ্রীয়ভাবে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার অনুমতি নেই। মাওলানা হাবিব জানান, পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে এ বছরের ডিসেম্বর মাস লাগতে পারে। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন