বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজনৈতিক প্রভাবে আদায় হচ্ছে না ১৩ হাজার দোকানের বকেয়া ভাড়া
আনিসুর রহমান তপন : সারাদেশে রেলওয়ের স্টেশনগুলোয় কর্তৃপক্ষ যেসব দোকান ভাড়া দিয়েছে তার ভাড়া আদায় করতে পারছে না এখন। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা ও ভাড়াটিয়া দোকানদারদের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সারাদেশের ১৩০টি স্টেশনে ভাড়া দেওয়া ১৩ হাজার দোকানের ভাড়া বকেয়া হয়েছে ১৮০ কোটি টাকারও বেশি।
প্রসঙ্গত, ৪০ ফুটের এসব দোকানের মাসিক ভাড়া প্রতি বর্গমিটার ৮শ টাকা। স্টেশনের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মিটানো ও বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে এসব দোকান ভাড়া দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, সম্প্রতি সারাদেশের বিভিন্ন স্টেশনে ভাড়া দেওয়া দোকানের বকেয়া ভাড়াবিষয়ক এক প্রতিবেদন তৈরি করে রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি বিভাগ। এতে বকেয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ২০০২ সালের জুলাই থেকে ভাড়া আদায় হয় না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক কর্মীরা রেলস্টেশনের দোকান ভাড়া নেন। ফলে শুরুর দিকে কিছু দিন নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করলেও পরে তারা এ বিষয়ে আর আগ্রহ দেখায় না। এতে বিভিন্ন স্টেশনে প্রায় দেড় দশক ধরে দোকান ভাড়া আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার অনেক সময় ভাড়া আদায়ের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদেরও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ রয়েছে। এতেও ভাড়া বকেয়া পড়ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ৭৫টি স্টেশনে ২ লাখ ১৭ হাজার ৯২১ বর্গফুট স্থান দোকান হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। দোকানের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৬ হাজার। এসব দোকানে ২০০২ সালের জুলাই থেকে ২০০৬ সালের জুন পর্যন্ত চার বছরে বকেয়া ভাড়া ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আর ২০০৬ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বকেয়া ২০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
এদিকে, পশ্চিমাঞ্চলের ৫৫টি স্টেশনে ২ লাখ ২৫ হাজার ৭৮৮ বর্গফুট স্থান দোকান হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সেখানে দোকানের পরিমাণ প্রায় ৭ হাজার। এসব দোকানে ২০০২ সালের জুলাই থেকে ২০০৬ সালের জুন পর্যন্ত চার বছরে বকেয়া ভাড়া ৮৭ লাখ টাকা। আর ২০০৬ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বকেয়া ২ কোটি ২ লাখ টাকা।
এছাড়া ২০০৬ সালের রেলওয়ের ভূমি বরাদ্দ নীতিমালা অনুযায়ী, দোকান ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে লাইসেন্স ফি পরিশোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে পূর্বাঞ্চলের জন্য বর্গফুটপ্রতি ৩৩৫ টাকা ও পশ্চিমাঞ্চলে বর্গফুটপ্রতি ২২৩ টাকা। এতে দোকান ভাড়াবাবদ লাইসেন্স ফি বকেয়া পড়েছে যথাক্রমে ৫১ কোটি ৭০ লাখ ও ৫০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আর বকেয়া ভাড়া ও লাইসেন্স ফির ওপর ২০ শতাংশ জরিমানা পাওনা হয়েছে রেলওয়ের। এতে পূর্বাঞ্চলে ১৪ কোটি ৭১ লাখ ও পশ্চিমাঞ্চলে ১৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা জরিমানা বাবদ পাবে রেল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দোকান ভাড়ার ওপর ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ উৎসে করারোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে পূর্বাঞ্চলে পাওনা আছে আরও ৮ কোটি ২৮ লাখ ও পশ্চিমাঞ্চলে ৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে সারাদেশের ১৩০টি স্টেশনে ১৮১ কোটি টাকা ভাড়া বকেয়া রয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, লোকসান কমানো ও আয় বাড়াতে রেলওয়ে সব ধরনের জমির ইজারা মূল্য ও দোকান ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য পূর্বের বকেয়ার চূড়ান্ত হিসাব প্রণয়ন করা হয়েছে। এগুলো দ্রুত আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি শিগগিরই স্টেশনের দোকানগুলোর ভাড়া পুননির্ধারণ করা হবে। যারা নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করবে তারা বহাল থাকবে। অন্যথায় ভাড়াটিয়াদের উচ্ছেদ করা হবে। এক্ষেত্রে নতুন করে দোকান ভাড়ার ব্যবস্থা করা যাবে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি