জঙ্গি মোকাবিলায় পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ যুক্ত হচ্ছে ২০ হাজার পুলিশ
আজাদ হোসেন সুমন : অপরাধ বৈচিত্র্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য আরও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্রপাতি আমদানি করার কথা ভাবছে সরকার। পুলিশের লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়িয়ে জঙ্গি মোকাবিলায় আরও সক্ষম করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমেই আসছে বড় ধরনের নিয়োগ। কূটনৈতিক এলাকা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা দিতে ও জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে এ বছরের মধ্যেই আরও ২০ হাজার পুলিশ নিয়োগের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
স্বরাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে নিরাপত্তাজনিত এই ইস্যুটি নিয়ে ভাবছে অর্থ বিভাগ। তারা মনে করছে, দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী হামলার যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, তার প্রভাব কাটিয়ে অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এজন্য প্রয়োজন আরও জনবল।
গত বছর ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগের একটি চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় ২০ হাজার পুলিশ নিয়োগের অনুমোদন দেয়। পুলিশ বাহিনীতে প্রায় ১ লাখ ৭০ জন জনবল রয়েছে। জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে পুলিশের সংখ্যাও বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা। পুলিশের বর্তমান অপ্রতুল জনবল দিয়ে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন ব্যাপার। এর মধ্যে কমবেশী ৩০ হাজারের মতো কর্মরত থাকে রাজধানীতে। মানুষকে অধিক সেবা দিতে শুধু রাজধানীতেই এক লাখ পুলিশ দরকার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পর্যবেক্ষক মহলের মতে আইনশৃঙ্খলার ধরণ বদলেছে, খুন, রাহাজানি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই কমেছে। কিন্তু দেশে এখন জঙ্গি হামলা ও হুমকিতে আতঙ্ক উৎকণ্ঠা- বিরাজ করছে। জঙ্গিরা এখন বাংলাদেশে সরব। এ সরকার দেশের বারোটা বাজাতে তারা উঠে পড়ে লেগেছে। সুতরাং পরিবর্তিত এ পরিস্থিতিতে সরকারকে জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশপাশি নানামুখী উদ্যোগ নিতে হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, লোকবল বৃদ্ধি করা ছাড়াও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে সরকারের আলোচনা অব্যাহত আছে। এ আলোচনার বিষয়বস্তু হচ্ছে পুলিশের জন্য উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করা। খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, দেশে প্রতি ১ হাজার ৩০ জন মানুষের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন একজন পুলিশ সদস্য, যা পাশের দেশ ভারতে প্রতি ৭৩০ জন এবং জাপানে ২৫০ জনের নিরাপত্তায় রয়েছে একজন করে পুলিশ। এ পরিস্থিতিতে পুলিশের জনবল ঘাটতির বিষয়টি একাধিকবার পুলিশ সদর দফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন দফতরকে অবহিত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে আইজিপি একেএম শহীদুল হক মুঠোফোনে আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, এমনিতেই জনসংখ্যার তুলনায় পুলিশ সদস্যের সংখ্যা কম। এখনতো আবার বাড়তি নিরাপত্তা। বিশেষ করে দূতাবাসগুলো ডিপ্লোমেটিক জোন, ভিআইপি, স্পর্শকাতরস্থান ও গুরুত্বপূণর্ স্থাপনা গুলোতেও পর্যাপ্ত ফোর্স মোতায়েন করতে হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন মন্দিরের নিরাপত্তায় হাজার হাজার পুলিশ মোতায়েন আছে। এ অবস্থায় পুলিশের জনবল নিয়োগটা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, অপরাধের ধরণ যেহেতু পাল্টেছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুলিশ সদস্যদের সেটা মাথায় রেখেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি