আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা আসছেন জাইকাপ্রধান বেসরকারি নিরাপত্তায় অস্ত্রবহন ও সম্পর্ক অটুট রাখতে চায় জাপান
দীপক চৌধুরী : জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) প্রেসিডেন্ট শিনিচি কিতাওকা বাংলাদেশে আসছেন। এদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আগের মতো অটঁট রাখতে এবং জাইকাকর্মীদের নিরাপত্তা ইস্যু নিশ্চিত করতে তিনি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়েও কথা বলবেন। এ কারণে আগামী ৬ ও ৭ আগস্ট তিনি ঢাকা সফর করবেন বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলায় জাপানের সাত নাগরিক নিহতের ঘটনার পর সৃষ্ট পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণ করবেন শিনিচি। পাশাপাশি ভবিষ্যতে সহায়তা কার্যক্রম বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন শিনিচি কিতাওকা। এছাড়াও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন তিনি।
একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীদের অস্ত্র বহনের অনুমতি চাইবে জাপান। যদিও জাপানের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার (জাইকা) ঢাকা কার্যালয় এবং সারা দেশের প্রকল্পগুলোতে জরুরিভিত্তিতে সার্বক্ষণিক পাহারা দিচ্ছে পুলিশ। তবে ওইসব কার্যালয়ে নিরাপত্তায় নিয়োগ দেওয়া বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অস্ত্র বহনের অনুমতি দেওয়ারও অনুরোধ জানানো হয়েছে জাপানের পক্ষ থেকে।
ঢাকায় জাপান দূতাবাস এক সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছে। সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।
জাইকার পাশাপাশি জাপানের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সাহায্য সংস্থায় কর্মরত সে দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা জোরদারে সরকারকে বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে চিঠিতে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান জানিয়েছেন, দূতাবাসগুলো থেকে চিঠি পেয়েছি। তাদের চাহিদা ও আমাদের সামর্থ্য বিবেচনা করে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।
১ জুলাইয়ের হামলায় নিহত জাপানের সাত নাগরিকের ছয়জন কাজ করতেন সে দেশের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে পরিচালিত ঢাকার মেট্রোরেল প্রকল্পে। ওই সময় তাদের কাজ ছিল ঢাকার যানবাহন চলাচলের উন্নয়নে অবকাঠোমো প্রকল্পের জরিপে সার্বিক সহায়তা।
একটি সূত্র জানিয়েছে, এরইমধ্যে জাপান কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ৮০ জনেরও বেশি কর্মী বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন। গুলশানস্থ জাইকার মূল কার্যালয়সহ বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যালয় ছাড়াও শহর থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত জাইকার যেসব কর্মী দিনরাত সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে কাজ করেন- সেসব স্বেচ্ছাসেবককে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রদান করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে কি-না নিজেদের এই প্রশ্নও তুলেছেন জাইকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তা থেকেই নাকি জাইকা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কর্মরত প্রায় ৮০ জন কর্মীকে এরই মধ্যে জাপানে ফেরত নিয়ে গেছে। পাশাপাশি এদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটি।
গুলশানের নৃশংস হত্যাকা-ের পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। আসেম সম্মেলন চলাকালেও ১৫ জুলাই মঙ্গোলিয়ায় তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পৃথক বৈঠক করেন। এসময় বাংলাদেশে বসবাসরত জাপানি নাগরিকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতের আশ্বাস দেন শেখ হাসিনা।
নাম না প্রকাশের শর্তে জাইকার একটি সূত্র এ প্রতিবেদককে জানিয়েছে, বর্তমানে জাইকার স্বেচ্ছাসেবাভিত্তিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশে। যদিও বিভিন্ন প্রকল্প কার্যালয়গুলো একদম গুটিয়ে নেওয়া হয়নি।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এক কর্মকর্তা জানান, শিনিচি এলে সম্প্রতি জাইকার কোনো প্রেসিডেন্টের এটিই প্রথম বাংলাদেশ সফর। এ সফর বাংলাদেশে উন্নয়ন কার্যক্রমে অংশ নেওয়া জাইকার অঙ্গীকারেরই অংশ। আর এদেশে শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের আলোচনার মধ্যে প্রধান থাকবে নিরাপত্তার বিষয়। বাংলাদেশে অবস্থানরত জাইকার কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, জাইকা প্রেসিডেন্ট শিনিচি কিতাওকা গত ৪ জুলাই টোকিওতে এক শোকসভায় ঢাকার ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বক্তৃতার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে বাংলাদেশে কার্যক্রম নিয়ে ভেবে দেখতে হবে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি