
আড়াই বছরে ইউরোপে যত সন্ত্রাসী হামলা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জার্মানির মিউনিখে অলিম্পিয়া শপিং সেন্টারে বন্দুকধারীদের গুলিতে কমপক্ষে ৯ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহতদের মধ্যে একজন হামলাকারী থাকতে পারে। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে এ হামলা চালানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, তিন হামলাকারীকে তারা খোঁজছেন। স্মরণকালের বিরাটাকারের গ্রেফতার অভিযান পরিচালিত হচ্ছে মিউনিখে। বাস, ট্রাম, ট্রেন ও ট্যাক্সি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়দের ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রয়টার্স
এ নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় দফা সন্ত্রাসী হামলা চালানো হলো জার্মানিতে। এর আগে সোমবার একটি কুঠার নিয়ে হামলা চালায় এক আফগান শরণার্থী কিশোর। হামলায় ২০ জন আহত হন। জার্মানিতে এ দুটি হামলা ছাড়াও ২০১৪ পর থেকে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হামলার তথ্য-
২৪ মে, ২০১৪ – বেলজিয়ামের ব্রাসেলসের এক জাদুঘরে বন্দুকধারীর হামলায় চারজন নিহত হন। হামলাকারী ছিলেন ফরাসি নাগরিক মেহেদি নিমওউচ, যাকে পরবর্তী সময়ে ফ্রান্সের মার্সেই থেকে গ্রেফতার করা হয়।
৭-৯ জানুয়ারি, ২০১৫ – ৭ জানুয়ারি দুই ইসলামি জঙ্গি ব্যঙ্গ সাময়িকি শার্লি এবদো অফিসে ঢুকে ১৭ জনকে হত্যা করে। আরেক জঙ্গি পরদিন একজন নারী পুলিশকে হত্যা করে ৯ জানুয়ারি একটি সুপারমার্কেটের মানুষকে জিম্মি করে। পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার আগে সে চারজনকে হত্যা করে।
১০ অক্টোবর, ২০১৫ – তুরস্কের আঙ্কারায় প্রধান রেলস্টেশনের কাছে ও একটি দলের সমাবেশে পৃথক দুটি বোমা হামলায় ১০২ জনের মৃত্যু হয়। বোমা হামলাকারীরা আইএসের দক্ষিণ-পূর্ব সেলের সদস্য বলে দাবি করে তুরস্ক।
১৩ নভেম্বর, ২০১৫ – প্যারিসে বিনোদন কেন্দ্রে বন্দুকের গুলি এবং বোমা হামলায় ১৩০ জন মারা যান। আইএস এ হামলার জন্য দায় স্বীকার করে। ১০ হামলাকারীর মধ্যে দুই বেলজিয়ান ও তিনজন ফরাসি নাগরিক ছিল।
১২ জানুয়ারি, ২০১৬ – আইএসের এক আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী সিরিয়ার উদ্বাস্তু হিসেবে তুরস্কে প্রবেশ করে ইস্তানবুলের ঐতিহাসিক পর্যটনকেন্দ্রে হামলা করে। এ সময় ১২ জন জার্মান নাগরিক প্রাণ হারান। আহত হন আরও অনেক বিদেশি।
১৯ মার্চ, ২০১৬ – আত্মঘাতী এক বোমা হামলাকারী ইস্তানবুলের সবচেয়ে জনপ্রিয় শপিং জেলা ইস্তিকলাল স্ট্রিটে তিন ইসরায়েলি পর্যটক ও একজন ইরানিকে হত্যা করে। এই হামলাকারী আইএসের তুর্কি সদস্য ছিল বলে জানান দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
২২ মার্চ, ২০১৬ – বেলজিয়ামের নাগরিক তিন আইএস আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে বিমানবন্দর ও মেট্রোরেলে হামলা চালিয়ে ৩২ জনকে হত্যা করে। পুলিশ নভেম্বরে প্যারিসে হামলার সঙ্গে এর যোগাযোগ খুঁজে পায়।
১৪ জুন, ২০১৬ – মরোক্কান বংশোদ্ভূত এক ফরাসি নাগরিক প্যারিসের উপকণ্ঠে এক পুলিশ কমান্ডার এবং তার সহযোগীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে।
২৮ জুন, ২০১৬ – ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে তিন জঙ্গির অবিরাম গুলিবর্ষণে ৪৫ জন নিহত হন। এতে আহত হন আরও শতাধিক ব্যক্তি। এ হামলার জন্য আইএসকে দায়ী করে তুরস্ক।
১৪ জুলাই, ২০১৪ – ১৪ জুলাই বৃহস্পতিবার রাতে বাস্তিল দিবস উদযাপনের জন্য ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর নিসের প্রমেনাদে দেজ অ্যাংলেইসে আতশবাজি প্রদর্শনী দেখতে জড়ো হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। একটি ট্রাক বেপরোয়াভাবে ওই জমায়েতের দিকে ছুটে আসে। আতঙ্কিত লোকজন এদিক সেদিক ছুটোছুটি শুরু করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি,ওই ট্রাক চালক মানুষকে ট্রাকচাপা দেওয়ার পাশাপাশি গুলিও চালিয়েছে। পরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় ৮৪ জন নিহত হন, আহত হন ২০২ জন। নিহতদের মধ্যে ১০ জন শিশুও রয়েছে। শুক্রবার ট্রাক চালক হিসেবে বৌহলেলকে শনাক্ত করে পুলিশ। তিনি তিউনিসিয়ান বংশোদ্ভূত ফরাসি নাগরিক বলে জানানো হয়। এ ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা বলে উল্লেখ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ।
