বন্যা পরিস্থিতির অবনতি বগুড়ায় যমুনার পানি বিপদসীমার উপরে
নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বেড়েছে সবকটি নদ-নদীর পানি। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে পানি ও খাদসংকট। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, জামালপুর, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে। এছাড়া গাইবান্ধা, নড়াইল, কুষ্টিয়া ও রাজবাড়ীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে দুর্গত এলাকায় বাড়ছে দুর্ভোগ। ত্রাণের আশায় পানিবন্দি কয়েক লাখ মানুষ।
শুক্রবার রাত থেকে আবারও বৃষ্টি হওয়ায় সুরমা নদীর পানি বইছে বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপরে। পানি বেড়ে সুনামগঞ্জ শহরতলির নবীনগর-ধারারগাঁও সড়কে দেখা দিয়েছে ভাঙন। পর্যাপ্ত ত্রাণের অভাবে বেড়েছে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ। কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, বারোমাসি, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হয়েছে ২৯০টি গ্রাম। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ৩ হাজার ৯৩০টি পরিবার। ধরলার তীরবর্তী সোনাইকাজী-রামপ্রসাদ গ্রামের ওয়াপদা বাঁধটি ভেঙ্গে যাওয়ায় ধরলার পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর। অন্যদিকে ফুলবাড়ী-লালমনিরহাট সড়কের পশ্চিমপাড়ে নির্মাণাধীন ধরলা সেতুর উত্তর-পশ্চিম দিকে ধরলার স্রোত প্রখর থাকায় ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, ১৮ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান, বীজতলা ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। পানি বেশিদিন স্থায়ী হলে এসব ক্ষেতের ফসল সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় জামালপুরে যমুনা নদীর পানি বেড়ে বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বইছে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপরে। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বিভিন্ন এলাকায়। লালমনিরহাটে বিপদসীমার ৩৬ সে.মি. ওপরে ধরলার পানি। তিস্তার উজানে পানি কমলেও কাটছে না জলাবদ্ধতা। বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বাড়ায় প্লাবিত হচ্ছে নদীতীর ও চরাঞ্চল।
বন্যায় গাইবান্ধার সাঘাটা, ফুলছড়ি, সুন্দরগঞ্জ ও সদর উপজেলার নদী তীরবর্তী ২২টি ইউনিয়নের ৭০টি গ্রামের ২০ হাজার পরিবারের ২ লাখ ৪০ হাজার বন্যাকবলিত মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ক্রমাগত বৃষ্টি আর বন্যার পানিতে দুর্ভোগ ক্রমেই বাড়ছে। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় নদী ভাঙ্গনের তীব্রতাও বেড়েছে। এছাড়া বন্যায় পাট, পটল, রোপা আমনের বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নড়াইলে মানুষের প্রতি মুহূর্র্ত কাটছে মধুমতির ভাঙন আতঙ্কে। জানা গেছে, স্রোতের তোড়ে কোটাকোল ইউনিয়ন থেকে শালনগর পর্যন্ত প্রায় ৬০ কি.মি. এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে মধুমতির নীরব ভাঙন চললেও তা রোধে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অসংখ্য মানুষের বসতভিটা ও চাষের জমি কেড়ে নিয়েছে সর্বনাশা খরস্রোতা মধুমতি। এলাকার সচেতন মহলের দাবি, মধুমতির ভাঙনরোধে সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে নদী তীরবর্তী মানুষকে নিরাপদে বসবাসের সুযোগ করে দিবে।
কুষ্টিয়ার গড়াই নদের ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর। জেলার খাকসা উপজেলায় গড়াই নদের ভাঙনে গত এক সপ্তাহে শতাধিক বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে আছে আরও শতাধিক বাড়ি। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা