মতবিনিময় সভায় পরামর্শ জঙ্গিবাদ রুখতে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা নিতে হবে
ফারহান ফারুক: বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সম্মিলিত নাগরিক সমাজ আয়োজিত ‘সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ ও বিপথগামী তারুণ্য: প্রতিরোধ ও প্রতিকার’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তারা এ পরামর্শ দেন।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সংগঠনের চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, যারা জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে বা ইতোমধ্যেই জঙ্গিবাদের দীক্ষা নিয়েছে তাদের চিহ্নিত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা বা আইনী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে জঙ্গিবাদ একটি গুরুতর বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সমাধানে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজন। সুতরাং বাস্তবতার আলোকে এবং দেশের স্বকীয়তা বজায় রেখে অন্যান্য দেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করার মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশ নয় বরং বিশ্ব থেকে জঙ্গিবাদ দূরীকরণে বাংলাদেশ সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, পারিবারিক শিক্ষা জঙ্গিবাদ রুখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এজন্য সন্তানদের প্রতি নজর রাখা দরকার। ছেলে-মেয়েদের সুস্থ চিন্তা, মানবিক ও সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টি জঙ্গিবাদ রুখতে পারে। তারা যেন বিপথগামী না হয় সেদিকে শুধু পরিবার ও অভিভাবক নয়, শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নজর রাখতে হবে। অঙ্গীকার ও সক্ষমতা থাকতে হবে। শিক্ষার্থীরা মাদকাসক্তি ও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় জড়িয়ে পড়ছে কিনা সে দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কড়া নজরদারিতে রাখার আহ্বান জানান তিনি।
অর্থনীতিবিদ ও সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহীম খালিদ বলেন, সুশীল সমাজের একটি অংশ বলছে, জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্য বিএনপি-জামায়াত ছাড়া হবে না। তারা আবার বলছে, দেশে গণতন্ত্র, মানুষের অধিকার নেই বলে এ হামলা হচ্ছে। তাহলে বিশ্বের মধ্যে গণতন্ত্রের উজ্জ্বল উদাহরণ ফ্রান্স। সেখানে কেন তাহলে হামলা হল? গণতান্ত্রিক দেশেই বেশি হামলা হচ্ছে। জঙ্গি দমনে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। সে কমিটি গোয়েন্দাদের জঙ্গি বিষয়ে ধারণা দেবে বলে তিনি জানান।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ বলেন, জঙ্গিবাদ রাজনীতির একটি সস্তা হাতিয়ার। এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে ব্যবহৃত হচ্ছে। ৭১ এর পরাজিত শক্তি, ক্ষমতালোভী, উগ্রবাদে বিশ্বাসী এক শ্রেণি ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গিবাদ রুখতে পারবে না, এজন্য সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারকে সেদিকে নজর রাখতে হবে।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তি ম, হামিদ বলেন, প্রলোভনের মাধ্যমে ধর্মের নামে মানুষ হত্যায় যুবকদের ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই শিশুদের গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নজরদারিতে রাখতে হবে।
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না। শিশুদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয় না। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস পড়ানো ও জাতীয় সঙ্গীত বাধ্যতামূলক করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলে শিশুরা দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ হবে, জঙ্গি মনস্ক হবে না।
সভায় মুক্তিযুদ্ধ কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ, জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি শফিকুর রহমান, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সভাপতি একেএম হামিদ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক একেএম নুর-উন-নবী বক্তব্য রাখেন। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম