আইএস না, দেশের জঙ্গিরাই হামলা চালাচ্ছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আজাদ হোসেন সুমন : বাংলাদেশে আইএস আছে কি নাই এ প্রশ্নের জবাবে বরাবরই সরকারের পক্ষ থেকে আইএস নেই বলে দাবি করা হচ্ছে। গতকালও একই কথার পুনরাবৃত্তি করে দেশীয় জঙ্গি সংগঠনগুলোই বিভিন্ন স্থানে হামলা চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় পরিবারগুলোকে সন্তানদের প্রতি নজর দেওয়াসহ সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার আহ্বান জানান। গতকাল শনিবার বেলা ১১টায় কাওরান বাজারের এফডিসিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় এ আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ‘শুদ্ধ হোক সমাজ, মুক্ত হোক বিবেক’ এই সেøাগান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সংসদীয় পদ্ধতির জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা ‘ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট’-এর উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে শপথ নেওয়ার মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া ওই অনুষ্ঠানে ম?ন্ত্রী আরও বলেন, আনসারুল্লাহ বাংলাটিম, হুজিসহ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এখন শোনা যাচ্ছে, হামজা নামে একটি জঙ্গি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করছে। অনেকে বলেন, দেশে আইএস (ইসলামিক স্টেট) আছে। আমরা বলব, দেশের জঙ্গিরাই হামলা চালাচ্ছে। ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের সব পর্যায় থেকে জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশকে সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হয়েছে। আগে জঙ্গিবাদে মাদ্রাসার অপ্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রদের উৎসাহিত করা হতো। এখন সমাজের প্রতিষ্ঠিত মেধাবীদের কাছে গিয়ে জঙ্গিরা জিহাদের নামে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। ধর্মের অপব্যাখ্যা করছে।
তিনি বলেন, আমরা কোনো দেশ দখল করিনি। সিরিয়া, পাকিস্তান বা ইরাকের সঙ্গে আমাদের কোনো সীমান্তও নেই। এর অর্থ, কোনো বিদেশি এসে আমাদের দেশ দখল করেনি। দেশের কিছু মানুষই দেশের বিরুদ্ধে কাজ করছে। স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতাকারীরাই এখন ছাত্রদের জঙ্গি হতে মদত দিচ্ছে।
জঙ্গিবাদ দমনে সরকার সব সময় সতর্ক অবস্থায় আছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সতর্কতার কারণে গুলশানে জিম্মির ঘটনা শুরুর তিন মিনিটের মধ্যে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হতে পেরেছে। শোলাকিয়ায় আগে থেকেই তল্লাশি চৌকি বসানো হয়। তা না হলে হামলায় মৃত ব্যক্তির সংখ্যা আরও বেশি হতো।
অভিভাবকদের প্রতি সন্তানদের প্রতি নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকারের পাশাপাশি সমাজকেও জঙ্গিবাদ দমনে এক হয়ে কাজ করতে হবে। সন্তানের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কারণে কোনো বাবাকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হচ্ছে এমন কিছু আমরা দেখতে চাই না। প্রতিটি পরিবার সন্তানদের দিকে খেয়াল রাখলে এ অপরাধ অনেকখানি কমে আসবে। সমাজে সচেতনতাও বাড়বে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চেয়ারম্যান এম এ সবুর। উদ্বোধনী দিনে ‘সামাজিক সচেতনতাই জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করতে পারে’ এ বিষয়ের উপর বিতর্কে অংশ নেয় দুটি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিযোগিতায় ছায়া সংসদে সরকারি দলের ভূমিকায় ছিল বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি। বিরোধী দলে ছিল প্রাইম ইউনিভার্সিটি। সমানসংখ্যক নম্বর পাওয়ায় দুই দলকে যৌথভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানটি এটিএন বাংলায় সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম