প্রথমবারের মতো জনপ্রশাসন পদক প্রদান সম্মাননা ও সনদ পেলো ৩০ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান
দেলওয়ার হোসাইন : জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সৃজনশীল ও ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসাবে প্রথমবারের মতো জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে ৩০ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে জনপ্রশাসন পদক-২০১৬ প্রদান করা হয়েছে।
পদকের জন্য জেলা, মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে ১২৯টি আবেদন জমা পড়ে। এ থেকে বাছাই কমিটি জাতীয় পর্যায়ে ১৩ ও জেলা পর্যায়ে ১৭ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে এ পদক প্রদান করেছে। এবারই এ পদক প্রথম দেওয়া হলেও এখন থেকে প্রতিবছর দেওয়া হবে। শনিবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে পদক ও সম্মাননা তুলে দেন। জাতীয় পর্যায়ে পদকপ্রাপ্তরা হলেন: সাধারণ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত শ্রেণিতে বিসিএস (প্রশাসন) একাডেমির উপ-পরিচালক ড. রহিমা খাতুন তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল কার্যক্রম অবদানের জন্য জনপ্রশাসন পদক ২০১৬ পেয়েছেন। ড. রহিমা খাতুন ২০১৩ সালে ২০ জুন উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে সোনাইমুড়ী, নোয়াখালীতে যোগদান করেন। এরপর সরকারি সেবা প্রদানে তিনি তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে উদ্যোগী হন। তার উদ্যোগে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য সোনাইমুড়ী উপজেলার বিভিন্নস্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। অফিসে ডিজিটাল হাজিরা ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছে ও গুরুত্বপূর্ণ সভা-সেমিনার অনলাইনে প্রচার করা হচ্ছে। যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য তিনি উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, স্কুল-কলেজের শিক্ষকবৃন্দকে ৫০০টি কর্পোরেট মোবাইল সিম প্রদান করে মোবাইল অ্যাপস সংযোজন করেছেন। তার এসকল উদ্যোগ দ্রুত নাগরিক সেবা প্রদানে অবদান রেখেছে।
তার উদ্যোগে স্থানীয় জনগণের আর্থিক সহায়তায় ৬টি প্রাথমিক ৫টি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এবং ১টি মাদ্রাসাসহ ১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে ৪ দিন মিড-ডে মিল চালু করা হয়। পরে আরও ২৩টি স্কুলে এ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়।
সাধারণ ক্ষেত্রে দলগত শ্রেণিতে জনপ্রশাসন পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রামের (এটুআই) পরিচালক (দলনেতা) মো. মোস্তাফিজুর রহমান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব জাহিদ হোসেন পনির, বিসিএস (প্রশাসন) একাডেমির সহকারী পরিচালক জি এম সরফরাজ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব তন্ময় কুমার মজুমদার ও যশোর জেলার সহকারী প্রোগ্রামার মো. মোতাহার হোসেন। এরা সবাই যশোর জেলার সাবেক কর্মকর্তা। যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সেবাসমূহ কম খরচে, কম সময়ে ভোগান্তিহীনভাবে জনগণকে প্রদানের উদ্দেশ্যে একটি সফ্টওয়ার তৈরি ও ওয়ানস্টপ সার্ভিস স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বাস্তবায়নের অবদার রেখেছেন তারা।
সাধারণ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শ্রেণিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিট (জিআইইউ) বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি প্রবর্তন অবদানের জন্য জনপ্রশাসন পদক ২০১৬ পেয়েছেন।
কারিগরি ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত শ্রেণিতে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলা কৃষি অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী কৃষকের ডিজিটাল ঠিকানা সফ্টওয়ার উদ্ভাবন ও পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন অবদানের জন্য পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি কৃষকের ডিজিটাল ঠিকানা নামে একটি সফ্টওয়ার উদ্ভাবন করেন। সফ্টওয়ারটি মোবাইল, ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ কম্পিউটারে স্থাপন করে অনলাইন ও অফলাইন কৃষিভিত্তিক তথ্য সেবাসমূহ প্রদান করা হচ্ছে। এই সফ্টওয়ার সারাদেশে প্রচলিত হলে দেশের সকল কৃষক ঘরে বসে কৃষি সেবা পাবেন।
কারিগরি ক্ষেত্রে দলগত শ্রেণিতে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক (দলনেতা) মো. আনিছুর রহমান মিঞা, নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বেগম শাহীন আরা বেগম, সহকারী কমিশনার বেগম জয়া মারীয়া পেরেরা ও বেগম ফারহানা আফসানা চৌধুরী রেডিও নারায়ণগঞ্জ অবদানের জন্য জনপ্রশাসন পদক পেয়েছেন। নাগরিকদের কাছে সরকারের সেবা ও এ সংক্রান্ত তথ্য পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ২৩ জুলাই ২০১৫ তারিখ হতে জেলা প্রশাসক, নারায়ণগঞ্জ- এর উদ্যোগে রেডিও নারায়ণঞ্জ এর যাত্রা শুরু হয়।
কারিগরি ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শ্রেণিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রসার অবদানের জন্য জনপ্রশাসন পদক ২০১৬ পেয়েছেন জেলা পর্যায়ে ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে (সাধারণ) আরও পুরস্কার পেয়েছেন ঈশ্বরগঞ্জের ইউএনও রাজীব কুমার সরকার, দামুড়হুদার ইউএনও মো. ফরিদুর রহমান এবং পঞ্চগড় সদর উপজেলার সমবায় কর্মকর্তা মো. মামুন কবির।
পুরস্কার প্রাপ্তির তালিকায় আরও আছেন সড়ক ও জনপথের (সওজ) যুগ্ম সচিব এবং ফেনীর সাবেক জেলা প্রশাসক মো. হুমায়ুন কবির খন্দকার, ‘ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট’ প্রকল্পের সমন্বয়ক এবং ফেনীর সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. এনামুল হক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর ফেনীর উপ-পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী, ফেনী সদরের ইউএনও পিকেএম এনামুল করিম, ফেনী সদরের লেমুয়া ইউনিয়নের সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার রবীন্দ্রনাথ দত্ত, ফেনী চুনুয়া ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক পরিদর্শক মীর আজম হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক এবং রংপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক ফরিদ আহমেদ, এডিসি (রাজস্ব) রংপুর মোস্তাইন বিল্লাহ, এডিসি (রাজস্ব) শেরপুর এবং রংপুর পীরগঞ্জের সাবেক ইউএনও এটিএম জিয়াউল ইসলাম, দিনাজপুরের বোচাগঞ্জের ইউএনও এবং সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাশেদুল ইসলাম, রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম গোলাম কিবরিয়া প্রমুখ।
চট্টগ্রাম কর কমিশনারের কার্যালয়ের আওতাধীন কর অঞ্চল-২ এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয় জয়পুরহাট সাধারণ ক্যাটাগরিতে প্রতিষ্ঠান হিসাবে এই পুরস্কার লাভ করে। এ ছাড়া খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার ইউএনও বিএম মশিউর রহমান (ব্যক্তিগত পর্যায়ে) টেকনিক্যাল ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য এই পুরস্কার পেয়েছেন।
জাতীয় পর্যায়ে পদকপ্রাপ্তরা নিজের নামের সঙ্গে পিএএ (পাবলিক অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন অ্যাওয়ার্ডি) লিখতে পারবেন। জাতীয় পর্যায়ে তিন ক্যাটাগরির পুরস্কারপ্রাপ্তরা ১৮ ক্যারেট মানের এক ভরি ওজনের স্বর্ণপদক এবং সনদ পেয়েছেন। এর বাইরে জাতীয় পর্যায়ে ব্যক্তি শ্রেণিতে জনপ্রতি এক লাখ টাকা এবং দলগত অবদানের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক শ্রেণিতে শুধু পদক ও সম্মাননাপত্র প্রদান করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে ব্যক্তি শ্রেণিতে পুরস্কারপ্রাপ্তরা সনদ ও ৫০ হাজার টাকা এবং দলগত শ্রেণিতে বিজয়ীদের সনদের সঙ্গে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম