
তারেককে খালাস দেওয়া বিচারকের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক
দীপক চৌধুরী : অবসরে যাওয়া বিচারক মোতাহার হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জোরেশোরে অনুসন্ধান শুরু করেছে।
উচ্চ আদালতে তারেক রহমানের সাত বছরের সাজা ও ২০ কোটি টাকা জরিমানার রায় ঘোষণার পর দুদক নড়েচড়ে বসেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। অনুসন্ধানের জন্য দুদকের একজন উপপরিচালক হারুন-অর-রশীদকে নিয়োগ করে সংস্থাটি। কিন্তু দুদকের কার্যক্রমে তখন মারাত্মক ঢিলেমি ছিল বলে মোতাহার হোসেনের বিষয়ে কার্যকর কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।
২০১৪-এর জানুয়ারির শুরুতে মোতাহার হোসেনের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল দুদক। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট স্থলবন্দর, নৌবন্দর ও বিমানবন্দরে সতর্ক সংকেত জারি করা হলেও তখন সংশ্লিষ্ট সবাইকে ‘ফাঁকি’ দিয়ে বিদেশে পাড়ি দেন মোতাহার।
‘অবৈধভাবে বিদেশে অর্থপাচার’সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন বিচারক মোতাহার হোসেন। সে সময় তিনি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৩-এর বিচারক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ’১৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি অবসরে যান।
অর্থপাচার মামলায় তারেক রহমানকে খালাস দেওয়া বিচারক মোতাহার হোসেনের গাড়িচালক ও নিরাপত্তারক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন উর রশিদ। ’১৪-এর ২৩ জানুয়ারি ওই বিচারকের দুই স্টেনোগ্রাফারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে।
দুদকে জমা পড়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বিচারক মোতাহার হোসেনের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারেরও অভিযোগ রয়েছে। তার ছেলে লন্ডনে থেকে পড়াশোনা করেন। লন্ডনে মোতাহার হোসেন বাড়ি কিনেছেন। রাজধানীর ধানমন্ডিতে তিনি দুটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন। এ ছাড়া তার গ্রামের বাড়ি নাটোরে নামে-বেনামে কয়েক বিঘা কৃষি-অকৃষি জমি কিনেছেন বলে জানা যায়।
গতকাল দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান এ প্রতিবেদককে জানান, মোতাহার হোসেনের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ দুদকের অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে।
দুদকের একটি সূত্র জানায়, মোতাহার হোসেন মালয়েশিয়ায় আছেন নাকি লন্ডনে আছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেছেÑ তিনি লন্ডন, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে প্রায়ই যাওয়া আসা করেন।
দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত সূত্র জানায়, মোতাহার হোসেনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসে সংস্থাটির কাছে। এসব অভিযোগ নিজস্ব সূত্রে খবর নেয় সংস্থাটি। অভিযোগের ক্ষেত্রে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পরই বিস্তারিত অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। তবে মোতাহার হোসেনের ব্যাপারে অনুসন্ধানের জন্য দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করার কারণ সম্পর্কে দুদকের কোনো কর্মকর্তা কথাও বলতে চাননি বা নাম ও পরিচয় প্রকাশ করতে চান না।
দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করেও মোতাহার হোসেনকে পাওয়া যায়নি।
২০১০ সালের ৬ জুলাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারের মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় দুদক। ওই বছরের ১৭ নভেম্বর রায়ে তারেককে বেকসুর খালাস ও মামুনকে অর্থদ-সহ তারেককে খালাস দেওয়া হয়। বিচারক মোতাহার হোসেন সে সময় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তৎকালীন দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আমরা বহুদিন থেকেই তার অঢেল সম্পদের বিষয়ে শুনে আসছিলাম। তাই কমিশন সম্পদ অর্জনের বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে, গত শুক্রবার রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এক অনুষ্ঠানে অর্থপাচার মামলায় বিচারিক আদালতে তারেক রহমানের খালাস পাওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম দাবি করেন, বিচারক মো. মোতাহার হোসেনকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান তিন কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন। সম্পাদনা : আনোয়ার
