
নিপীড়নের প্রতিশোধে হত্যাকা-!
আমির পারভেজ : জার্মানির মিউনিখ শহরের শপিংমলে গত শুক্রবারে বন্দুকধারী হামলাকারী ইরান বংশোদ্ভূত জার্মান তরুণ ১৮ বছরের আলী সনবলি। ওই তরুণ একাই গুলি চালিয়ে ৯ জনকে হত্যা করেছে। সে গত দুই বছর ধরে মিউনিখে বসবাস করছিল। এ হত্যাকা-ের পর সে নিজে আত্মহত্যা করে। ডেইলি মেইল
মিউনিখের স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা ৫২ মিনিটে প্রথম গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়। কালো পোশাক পরিহিত এক তরুণ চিৎকার দিয়ে গুলি করতে শুরু করে।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিনি তখন ম্যাকডোনাল্ড রেস্তোরাঁর বাইরে দাঁড়িয়ে দেখতে পান, বুট জুতা পরিহিত ওই হামলাকারী তরুণ অভিবাসন-বিরোধী সেøাগান দিচ্ছিল এবং ব্যালকনিতে দাঁড়ানো এক লোকের কথার উত্তরে ওই হামলাকারী বলেন, ‘আমি একজন জার্মান। এখানেই আমার জন্ম।’ ব্যালকনির ওই লোকের সঙ্গে বাকবিত-ার একপর্যায়ে হামলাকারী গুলি ছুড়তে শুরু করে। হামলাকারী আরও বলে, ‘আমাকে সাত বছর ধরে নির্মম নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে।’ কিন্তু কি ধরনের নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে তাকে, সে সম্পর্কে কিছু বলেনি ওই তরুণ। এক ভিডিওতে দেখা যায়, হামলাকারী শপিং সেন্টারের এক ছাদে উঠে গুলি করছিল।
পুলিশ কমান্ডোরা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র এবং ডগ স্কোয়াড নিয়ে মিউনিখের ম্যাক্সভোরস্টাডে হামলাকারীর অ্যাপার্টমেন্টে তল্লাশি চালান। ওই অ্যাপার্টমেন্টে হামলাকারী তার পরিবারের সঙ্গে বাস করত। তার এক প্রতিবেশী জানিয়েছেন, ‘সে আমার পাশের অ্যাপার্টমেন্টেই থাকত। আমার এক বন্ধু তার সঙ্গেই স্কুলে পড়ত, আর আমার ওই বন্ধু তাকে একটি সাধারণ ছেলে হিসেবেই জানত। সে ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীকে শনাক্ত করে। আলীর মানসিক রোগের চিকিৎসা চলছিল।’
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক-স্টেইনমেয়ার বলেছেন, হামলার বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এমন জঘন্য কাজের কারণটা এখনো পরিষ্কার নয়। আমরা পরস্পর-বিরোধী কিছু সূত্র পেয়েছি।’
পুলিশ প্রাথমিকভাবে এই হামলাকে ‘সম্ভাব্য’ সন্ত্রাসী হামলা বলে উল্লেখ করলেও তারা এখনো ‘ইসলামি উগ্রবাদ’-এর সঙ্গে এই হামলার কোনো যোগসূত্র খুঁজে পাননি।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, জার্মান তদন্ত কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে হামলাকারীর সঙ্গে কথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস) বা অন্য কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সংযোগ খুঁজে পাননি। তবে টুইটারে আইএস সমর্থকরা এই হামলার সমর্থন জানিয়ে পোস্ট দিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারী একাই হামলা চালিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটারেরও কম দূরবর্তী রাস্তা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, হামলাকারী আত্মহত্যা করেছিল।
জার্মানির সংবাদমাধ্যম দের স্পেইজেল জানায়, নিহত যুবকের পিঠে একটি লাল ব্যাগ ছিল। ফলে পুলিশ আশঙ্কা করছিল মরদেহের সঙ্গে বোমা থাকতে পারে। মরদেহ পরীক্ষার জন্য তাই বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের রোবট পাঠানো হয়। রোবট মরদেহের সঙ্গে কোনো বিস্ফোরক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখে।
পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তির মরদেহ পাওয়া গেছে তাকে হামলার সময় শপিং সেন্টারে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা গেছে। তার সঙ্গে থাকা লাল ব্যাগ দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, হামলায় পিস্তল ব্যবহার করা হয়েছে। তবে হামলার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত করা যায়নি। পুরো বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মিউনিখের পুলিশ প্রধান।
প্রসঙ্গত, এখন পর্যন্ত হামলাকারীসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শিশুও রয়েছে। আহতের সংখ্যা ২১। এর মধ্যে ১৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ
