
এক সপ্তাহে দুই হামলা নিহত ১০ বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়, স্তব্ধ মিউনিখ
ইমরুল শাহেদ : এক সপ্তাহের মধ্যে মধ্য ইউরোপের দেশ জার্মানি দুবার সন্ত্রাসী হামলার শিকার হলো। মিউনিখে শুক্রবার সন্ধ্যায় অলিম্পিয়া বিপণি বিতানে সন্ত্রাসী হামলায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। বিশ্বনেতারা নিন্দার পাশাপাশি সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে সন্ত্রাসের মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়েছেন। মিউনিখে হামলার আগে আরো একটি হামলা হয়েছিল। সে হামলায় একজন আফগান তরুণ (১৭) ট্রেনে চারজনকে ছুরিকাঘাতে আহত করে। পরে পুলিশের গুলিতে হামলাকারী মারা যায়। শুক্রবার বিপণি বিতানে হামলার পরিস্থিতি পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলেও পুরো শহরে বিরাজ করছে এক ধরনের স্তব্ধতা। হামলার পর পুলিশ প্রশাসন অকুস্থলের চারপাশের বড় একটি এলাকাজুড়ে তৈরি করেছে নিরাপত্তা বলয়। ঘটনার পরপর মিউনিখে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। পরিবহন কর্তৃপক্ষ যে বাস, ট্রাম, ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল, তা এখনো সচল হয়নি। সাবওয়ে সার্ভিসও এখনো খুলে দেওয়া হয়নি। মাঝেমধ্যেই মিউনিখের আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে হেলিকপ্টার। গোলাগুলির সময় লোকজন চারদিকে দিগি¦দিক হারিয়ে ছোটাছুটি করছিল। যাদের তাৎক্ষণিকভাবে আশ্রয়ের প্রয়োজন স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের জন্য নিজেদের ঘরের দরজা খোলা রেখেছিল। মসজিদে রাত কাটাবারও অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ট্যুইট করে সবাইকে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করতে বলা হয়েছিল এবং পাবলিক প্লেসে না থাকতে বলা হয়েছিল। এখন সেটা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।
মিউনিখ হামলায় হামলাকারীসহ নিহত হয়েছে ১০ এবং আহত হয়েছে শিশুসহ ২৭ জন। বিবিসি জানিয়েছে, এর মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে এ ঘটনার সঙ্গে ইসলামিক স্টেট বা আইএসের কোনো সম্পৃক্ততা পায়নি জার্মান পুলিশ। হামলার পর আইএস কেন উল্লাস প্রকাশ করেছে তাও অস্পষ্ট। টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বন্দুকধারী নরওয়ের উগ্র জাতীয়তাবাদী ডানপন্থী এবং গণহত্যার আসামী আন্দ্রেস বেরিং ব্রেইভিকের অনুসারী ছিল বলে ধারণা করছে তারা। হামলাকারী মানসিক রোগী এবং বেশ কিছু দিন ধরে সে হতাশাজনিত রোগে ভুগছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। ১৮ বছর বয়সী হামলাকারী আলী সনবলির বাসভবনে তল্লাশি চালিয়ে কিছু কাগজপত্র পাওয়া গেছে। কাগজপত্রগুলোর মধ্যে একটি নিবন্ধ পাওয়া গেছে যেখানে ‘শিক্ষার্থীরা কেনো হত্যা করে’ এমন কথা লেখা ছিল।
অন্যদিকে মিউনিখ পুলিশ শুক্রবারের হামলার যদি কোন ভিডিও, ছবি বা অডিও কেউ ধারণ করে থাকে, সেগুলো পুলিশের কাছে জমা দিতে বলেছে। কিন্তু ঘটনার সময় পুলিশ কোনো ছবি এবং ভিডিও পোস্ট করতে বারণ করেছিল।
পুরো অভিযান নিয়ে মিউনিখ পুলিশ গতকাল একটি সংবাদ সম্মেলন করে। তাতে পুরো অভিযান সম্পর্কে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মিউনিখ পুলিশের প্রেসিডেন্ট হুবেরটাস আন্দ্রে। তিনি হামলাকারীর নাম উল্লেখ করেননি। তবে জানান, হামলাকারী ১৮ বছর বয়সী ইরানি বংশোদ্ভূত জার্মান নাগরিক। ওই তরুণ হামলাকারী নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি। তার মরদেহ শপিংমলের পাশের রাস্তা থেকে উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, হামলায় পিস্তল ব্যবহার করা হয়েছে। তবে হামলার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুরো বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মিউনিখের পুলিশ প্রধান। হুবেরটাস আন্দ্রে আরও জানান, পুলিশের অভিযানে দুই হাজার ৩০০ পুলিশ সদস্য অংশ নেন। এর মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় পুলিশ সদস্য, জার্মানির অন্যান্য অঞ্চলের পুলিশ সদস্য এবং সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ার পুলিশ সদস্য।
এদিকে, লুয়ান জেকিরি নামে এক প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ‘তিনি রেস্তোঁরার বাইরে দাঁড়িয়ে দেখতে পান, বুটজুতা-পরিহিত ওই হামলাকারী অভিবাসন-বিরোধী সেøাগান দিচ্ছিল।’
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক-স্টেইনমেয়ার বলেছেন, হামলার বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এমন জঘন্য কাজের কারণটা এখনও পরিষ্কার নয়। আমরা পরস্পরবিরোধী কিছু সূত্র পেয়েছি।’
