ব্যক্তি সচেতনতাই পরিবেশ সংরক্ষণের অন্যতম পথ
জাতিসংঘের এনভারমেন্টাল প্রোগাম এর আওতায় বিশ্বব্যাপী নেতৃবৃন্দ বিশ্বকে নতুন প্রজন্মের জন্য বিভিন্ন সংস্কারধর্মী ও নীতি নির্ধারণী কাজ করে যাচ্ছেন। যদিও বিভিন্ন সময়ে উন্নত দেশেসমূহের আচরণ বিশ্ববাসীকে হতবাক করেছে। তারপরও বিশ্বব্যাপী পরিবেশ আন্দোলন নতুন দিক নির্দেশনা প্রদানে সক্ষম হয়েছে একথা অনস্বীকার্য। পরিবেশ বিপর্যয় প্রধানত দুটি কারণ, একটি প্রাকৃতিক নিয়মে অন্যটি মানুষের অসংযত আচরণের জন্য। প্রথমটি নিবারণ অপ্রতিরোধ্য হলেও ব্যবহারজনিত নিয়ামক কারণগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে প্রাকৃতিক পরিবর্তনগুলোও ধীরগতিতে ঘটে বা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
পানির অপচয় রোধ : পৃথিবী এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত একমাত্র গ্রহ যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। বর্তমানে এই ক্ষুদ্র গ্রহে প্রায় ৭৩৫ কোটি মানুষের বসবাস। আগামী ২০৫০ সনে যা ১০০০ কোটিতে বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে পরিবেশ বিপর্যয় ও ক্রমাগত ভূকর্ষণের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন প্রায় ২৫% ব্যাহত হবে বলে বিজ্ঞানীগণ ধারণা করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী মানবকূলকে মানবসম্পদে পরিণত করা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বসবাস যোগ্য পৃথিবী রেখে যাওয়াই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য শুধু সরকার, নেতৃবৃন্দ বা কতিপয় পরিবেশবাদী বিজ্ঞানীর ভাবনাই যথেষ্ঠ নয়। প্রয়োজন গণজাগরণ তৈরি করে প্রতিটি মানুষের মধ্যে সচেতনতাবোধ তৈরি করা। কারণ সৃষ্টির সেরা জীব মানুষই একমাত্র নিজের ভোগ লালসা চারিতার্থ করা ও জীবিকার স্বার্থে প্রকৃতি ও পরিবেশেকে ধ্বংস করছে। আমরা সাধারণ মানুষের মধ্যে যদি পরিবেশ সচেতনতা তৈরি করতে পারি তাহলে খুব সহজেই পরিবেশ সংরক্ষণে বিশেষ অবদান রাখা সম্ভব। এক্ষেত্রে ব্যক্তি জীবনে ব্যবহার্য বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি একটু সচেতন হতে হবে। লক্ষ্য করুন, বিশ্বে যখন ১.৮ বিলিয়ন মানুষ প্রবল সুপেয় পানি সংকটে ভুগছে তখন পানি যেখানে একটু সহজলভ্য সেখানে পর্যাপ্ত পানি অপচয় করা হচ্ছে। শুধু ঢাকা শহরের কথাই চিন্তা করুন পার্শ্ববর্তী নদীগুলোর দুষণের জন্য উপরিভাগের পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় বেড়ে চলেছে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার। ফলে নিচের পানির স্তর ক্রমাগত নেমে যাচ্ছে। শংকা রয়েছে এভাবে পানির স্তর কমতে থাকলে একদিন এ শহর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যেতে পারে। এজন্য পরিকল্পিতভাবে উপরিভাগের পানি ব্যবহার বৃদ্ধি করতে সরকার ইতোমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। শুধু শহরের বাথরুমের/শৌচাগারের টয়লেট পানির ব্যবহার ধারণা পাল্টালে বিপুল অংকের সুপেয় পানি বা ভূগর্ভস্থ পানি নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
সাধারণত প্রতিদিন একজন মানুষের চাহিদা ২০০ লিটার স্বাদু পানি। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ২/৩ লিটার সরাসরি পান করার প্রয়োজন হয়। যিনি তিন লিটার পানি পান করেন কমপক্ষে ৬ বার পানি বিয়োজনের জন্য শৌচাগার ব্যবহার করেন। প্রতিবার ব্যবহারের পর ফ্লাস করলে প্রায় ১৫ লিটার সুপেয় পানি নষ্ট হচ্ছে। তাহলে ১৫ী৬= ৯০ লিটার পানি নষ্ট হচ্ছে প্রতিদিন। এই পানির লাইন খুব সহজেই পরিবর্তন করা সম্ভব। পাশ্ববর্তী নদী থেকে শহরগুলোতে প্রাথমিক বিশুদ্ধকরণের মাধ্যমে টয়লেটের ফ্লাস করার পানি সরবরাহ করা যেতে পারে খুব কম খরচে। তাহলে সুপেয় পানির ব্যবহার কমে অর্ধেকে নেমে আসবে। এজন্য সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।
লেখক : কবি ও যুগ্ম সচিব / সম্পাদনা : জব্বার হোসেন