কিভাবে একজন সাধারণ মানুষ জঙ্গি হয়ে উঠে?
একমাত্র সিরিয়ার ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত একধরনের ‘শক্তিশালী টেরোরিস্ট ড্রাগ ও হেলুসিনেটিং পিল’ দেওয়া হয় জঙ্গিদের (ড্রাগের নামটি বললাম না)। সহজ সরল তরুণদের কিডন্যাপ করে, দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কিংবা যেকোনো উপায়ে তাদের ফুসলিয়ে নিতে পারলেই এই ড্রাগ দিয়ে ব্রেইনওয়াশ করে তাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় আইএস। কতটা ব্রেইনওয়াশ করলে একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে পশুর মতো জবাই করতে পারে?
ইন্টারনেট অবলম্বনে জানা যায়, এই ড্রাগ মস্তিষ্ককে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যে, জিহাদিদের কোনোরকম অবসাদ ও ভয় থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। এমপ্যাথি বা আবেগকেও এটা সম্পূর্ণ নির্মূল করে দেয়। এমপ্যাথি না থাকলে যে কেউ ঠা-া মাথায় খুন করতে পারে। অর্থাৎ মানুষকে দিয়ে অমানুষিক কাজ করানোর জন্য এই ড্রাগ হলো একটি ‘আদর্শ’ দাওয়াই। এই ড্রাগ নিলে কৃতকার্যের ফলাফল এবং কাজ কতটা খারাপ এই বিষয়ে সচেতনতাও হারিয়ে ফেলে। ফ্রি উইল বা স্বাধীন ইচ্ছাও নষ্ট করে দেয়। এমনকি জীবন-মরণের কথা না ভেবেই যুদ্ধে চলে যায়। এ সময় যদি জঙ্গিদের গায়ে বুলেটও প্রবেশ করে তাহলে সে মারা গেলেও তেমন বেদনা অনুভব করে না।
তবে এটার এফেক্ট পারমানেন্ট নয়। তাই ড্রাগ গ্রহণকারীদের রিকভার করা সম্ভব। এমনই একজন সন্দেহভাজন জঙ্গিকে দেশের বাইরে থেকে আনা হয়েছে। যে কিনা নিজের মা-বাবাকেও চিনতে পারছে না। যার শরীরে অসংখ্য ছোট ছোট ছিদ্র দেখা গেছে। যা ড্রাগ নেওয়ার ফলে হয়েছে এবং এভাবেই তার মস্তিষ্ক বিকৃত করা হয়েছে, এমনটিই সকলের ধারণা।এর ব্যতিক্রমও আছে, মানসিক আঘাত কিংবা প্রতিশোধ নিতেও কেউ মানুষ হত্যা করতে পারে।
৫ থেকে ২০ ডলারে পাওয়া এই ড্রাগ বিপুল পরিমাণে অর্থ যোগান দেয় আইএসকে। এটি টেরোরিস্টদের কাছে একটা মূল্যবান সম্পদ। এছাড়া জিহাদি, মিলিট্যান্ট ফাইটার ও যোদ্ধারা যুদ্ধ করার আগে এটি ব্যবহার করে। তাই এটি তাদের কাছে জনপ্রিয়।
বর্তমানে ল্যাবরেটরিতে তৈরি করা এই ড্রাগ অনেক দেশেই প্রচুর পরিমাণে বিক্রি করছে। যেহেতু এই ড্রাগ বিক্রির মাধ্যমে আইএস বড় অংকের অর্থ পায়, তাই অন্যান্য উদ্দেশ্যের মধ্যে একটি হতে পারে, এই ড্রাগের বিক্রি বাড়াতে তরুণদের ড্রাগ দিয়ে জিহাদি বানিয়ে মানুষ হত্যার মাধ্যমে তাদের তৈরিকৃত ড্রাগের কার্যকারিতার প্রচারণা চালাচ্ছে। আর পরকালের বেহেশত পাওয়া ও হুর-পরীর লোভ দেখিয়ে মুসলিমদের সহজে আয়ত্ত্বে আনা সম্ভব বলে মুসলিমদেরই হাতিয়ার বানাচ্ছে।
এক ঢিলে দুই পাখি, একদিকে ড্রাগ বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয় আর অন্যদিকে মুসলিমদের বদনাম। তাই এ বিষয়ে সচেতনতা ও সতর্কতার বিকল্প নেই।
লেখক : সাংবাদিক, রেডিও টুডে
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন