কক্সবাজারে রাজনীতির মাঠে বেড়েছে নারীর অংশগ্রহণ
ফরিদুল মোস্তফা খান, কক্সবাজার : কক্সবাজারের রাজনীতিতে বেড়ে চলেছে নারীর অংশগ্রহণ। বিগত কয়েক বছরে রাজনীতির মাঠে নারীর অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মত।
একসময় কক্সবাজারের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ ছিল না বললেই চলে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনীতিতে অনেকটা অগ্রসর হয়েছে কক্সবাজারের নারীরা। শহর থেকে শুরু করে গ্রামে পর্যন্ত রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করছে কক্সবাজারের নারীরা।
প্রায় ৫০ বছর ধরে রাজনীতির মাঠে কাজ করছেন প্রবীণ নারী রাজনীতিবিদ ও নারী মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আরা হক। তিনি বলেন ‘আমি যখন রাজনীতিতে নাম লিখাই তখন নারী ছিল পর্দার অন্তরালে। তারা ছিল শিক্ষার আলো থেকে অনেক দূরে । রাজনীতি কি জিনিস তা তারা বুঝতো না। বর্তমানে রাজনীতিতে কক্সবাজারের নারীরা অনেকদূর এগিয়ে গেছে। আমার হাত ধরে অনেক নারী আজ সফল রাজনীতিবিদ। তাদের দেখলে খুব ভালো লাগে। প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। আমি চায় রাজনীতিতে কক্সবাজারের নারীরা আরো এগিয়ে যাক। ‘তিনি জানান, বর্তমানে কক্সবাজার জাতীয় পার্টিতে প্রায় ২শ জন নারী রাজনীতিতে যুক্ত রয়েছে। যারা আজ কক্সবাজারে সফল রাজনীতিবিদ তারা খুব সহজে এ পথ পাড়ি দিতে পারেননি। শুরুতেই তাদের পথ মসৃণ ছিল না। আজকের অবস্থানে আসতে পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক চড়াই উতরাই আর সমাজের চোখ রাঙ্গানী ।
কক্সবাজার জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি আয়েশা শিরাজ বলেন, আজ থেকে প্রায় ১৯ বছর আগে রাজনীতিতে নাম লিখাই। প্রথমে অনেক সমস্যা সম্মুক্ষিণ হতে হয়েছে। পাড়া প্রতিবেশির নানা প্রকার বাঁকা কথা। আর পাড়ার মুরব্বিদের চোখ রাঙ্গানী উপেক্ষা করে আজকের এই অবস্থানে পৌঁছেছি। বর্তমানে রাজনীতি করতে তেমন কোন সমস্যা হয় না। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছে। মানুষ রাজনীতিকে অনেক সহজ ভাবে নিয়েছে।
তিনি জানান, বর্তমানে জেলা যুব মহিলা আওয়ামী লীগে আছে ৭১ জন কর্মী । প্রত্যেক উপজেলায় রয়েছে ৫১ জন করে কর্মী। তাছাড়া প্রত্যেক ওয়ার্ড পর্যায়েও রয়েছে কমিটি।
অনেক সমস্যা মোকাবেলা করে নারী আজ রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও সমস্যা যেন পিছু ছাড়ছে না। নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুক্ষিণ হতে হচ্ছে নারী রাজনীতিবিদদের।
জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হামিদা তাহের বলেন, এটা সত্যি যে নারীরা আগের তুলনায় রাজনীতিতে অনেকটা এগিয়ে এসেছে। নারীরা আরো ভালো ভাবে এগিয়ে যেতে পারতো যদি তাদের সঠিক মূল্যায়ন করা হত। পুুরুষ রাজনীতিবিদরা যারা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী তারা আমাদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে না। জেলা আওয়ামী লীগে ৩৩ ভাগ নারী কোটা থাকলেও আমরা তা পাই না। তাছাড়া কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাদের মতামত ছাড়াই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কানিজ ফাতেমা মোস্তাক বলেন, বর্তমান সরকার রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের প্রতি বিশেষ নজর দিচ্ছে। প্রতিটি বিষয়ে সরকার নারীকে এগিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু সঠিক মূল্যয়নের অভাবে নারীরা সঠিক অবস্থানে পৌঁছাতে পারছে না। সঠিক মূল্যায়ন পেলে, সকল বিষয়ে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলে রাজনীতিতে নারীরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. শামীম আরা স্বপ্না বলেন, ৩৫ বছর ধরে রাজনীতি করছি। শুরুর দিকে হাতে গোনা কয়েকজন ছিলাম আমরা রাজনীতির মাঠে। রাজনীতি সর্ম্পকে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা ছিল নারীদের মধ্যে। তাছাড়া তখনকার যুগে একজন নারী যে রাজনীতি করবে তা ছিল ধারণার বাইরে। বর্তমানে ও পুরুষের মত নারী রাজনীতির বিষয়ে আগ্রহী তা নয়। তবে এখন মানুষের চিন্তা চেতনার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। নারীরা আগের তুলনায় রাজনীতিতে অনেকটা সক্রিয় হয়েছে। নারীরা যোগ্যতা দিয়ে প্রমাণ করছে তারাও রাজনীতিতে পুরুষের সমকক্ষ।