শতকোটি টাকা লেনদেনের সম্ভাবনা
জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুরে এবার পানের ভাল দাম পাওয়াতে পান চাষিদের মুখে হাসি পুটেছে। উপকূলীয় এই জেলায় নারিকেল, সুপারী আর সয়াবীনের পর অর্থকারী ফসলের জন্য নতুনভাবে খ্যাতি এনে দিচ্ছে পান। অল্প পুঁজি, নিয়মিত শ্রম ও পরিচর্যার ফলে অধিক আয় করা সম্ভব বলে পানকে প্রধান কৃষি ফসল হিসেবেও বেছে নিয়েছেন জেলার বেশ কয়েকজন কৃষক।
অধিক লাভের আশায় দিন-দিন বেড়ে চলছে পানের চাষাবাদ। চলতি মৌসুমে পানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই পানের ভরা মৌসুমেও ভাল দাম পেয়ে খুশি এখানকার চাষীরা। এ বছর লক্ষ্মীপুরে পানকে ঘিরে শতকোটি টাকা লেন-দেনের সম্ভাবনার আশা করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ। কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় ৫শ’ হেক্টর জমিতে প্রায় আড়াই হাজার পানের বরজ রয়েছে। এর মধ্যে রায়পুর উপজেলায়ই ৪শ’ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ করা হয়। বছর জুড়ে পানের আবাদ ও ফলন হলেও আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন ও কার্তিক মাসে পানের বেশী ফলন হয়। বিশেষ করে বর্ষাকাল পানের ভরা মৌসুম। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এক বার আবাদকৃত বরজ থেকে ৯-১০ বছর পর্যন্ত পান তোলা যায়। তবে তার জন্য নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়। এ মৌসুমে প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ১৪ হাজার বিড়া (৭১টি পানে ১বিড়া) পান উৎপাদন হয়েছে। বর্তমানে প্রতি বিড়া পান ৫০ থেকে ৭০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। তবে দুই থেকে তিন মাস পর এ পানের দাম প্রতি বিড়া ১০০ থেকে ১২০ টাকা হারে পাইকারি বিক্রি হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় চাষীরা। রায়পুর উপজেলার উদমারা, উত্তর চরবংশী, দক্ষিণ চরবংশী, উত্তর চর আবাবিল, দক্ষিণ চর আবাবিল ইউনিয়ন ও সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়নে পানের সবচেয়ে বেশী আবাদ হয়। সপ্তাহে দু’দিন রায়পুরের উদমারা সর্দার ষ্টেশন, হায়দরগঞ্জ বাজার, নতুন বাজার, ক্যাম্পের হাট ও সদর উপজেলার মান্দারী বাজারে পানের পাইকারী হাট বসে। এখানকার পান স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ এলাকার পান চাষী হানিফ ভূঁইয়া জানান, তার এক একর জমিতে পানের বরজ রয়েছে। গত চার বছরে এ বরজ তৈরী ও আবাদ করতে তার ৫ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। তিনি এ পর্যন্ত ১১ থেকে ১২ লাখ টাকার পান বিক্রি করেছেন। এ পান চাষাবাদের মাধ্যমেই তিনি তার পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা পেয়েছেন।
পূঁজির তুলনায় লাভ বেশি বলে তিনি পান চাষ করছেন।
সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়নের রসুলগঞ্জ এলাকার পান চাষী রতন মজুমদার জানান, তিনি ৫০ শতাংশ জমিতে ৬০ হাজার টাকা খরচ করে পানের চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ হাজার টাকার পান বিক্রি করেছেন। এ বছর পানে পোকামাকড় ও রোগ বালাই তেমন হয়নি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পানের খুব ভাল ফলন হয়েছে। এখন পানের ভরপুর মৌসুমেও ভাল দাম পাচ্ছি। দুই থেকে তিন মাস পর পানের বিড়া বর্তমান বাজার দরের চেয়ে দ্বিগুণ মূল্যে বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা জানান, পানের বরজে পোকা-মাকড় দমনসহ যাবতীয় পরিচর্যায় কৃষি উপ-সহকারীরা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করছেন। এ মৌসুমে পানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে পানের ভরা মৌসুমেও চাষীরা ভাল দাম পাচ্ছেন। এ পানকে ঘিরে লক্ষ্মীপুরে বছরে শতকোটি টাকার লেনদেন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।