আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আপত্তি ছিল অনেক গোয়েন্দা-কর্তার। এমনকি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেরও সায় ছিল না। কিন্তু সব আপত্তি উড়িয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের জামাই অশোক পট্টনায়েককে জাতীয় গোয়েন্দা গ্রিডের (ন্যাটগ্রিড) প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করলেন নরেন্দ্র মোদি। মনমোহন জমানায় চিদম্বরম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন ন্যাটগ্রিড তৈরি হয়। কিন্তু মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এ সংস্থার চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার পদটি দীর্ঘ সময় ধরে খালি ছিল।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র্র মন্ত্রকের বিশেষ সচিব অশোক প্রসাদ গত জানুয়ারি পর্যন্ত ন্যাটগ্রিডপ্রধানের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। প্রসাদের অবসরের পর থেকে পদটি শূন্য ছিল। রাজনাথ সিংহ চেয়েছিলেন প্রসাদকেই ফের ওই পদের দায়িত্ব দেওয়া হোক।
১৯৮৩ ব্যাচের গোয়েন্দা-কর্তা অশোক পট্টনায়েকের স্ত্রী দমনের বাবার নাম মনমোহন সিংহ। তাই ন্যাটগ্রিড-প্রধানের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে পট্টনায়েককে আনার বিরোধিতা করেছিলেন একাধিক গোয়েন্দা-কর্তা। তা ছাড়া গোয়েন্দা বিভাগ তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাজ নিয়ে আরএসএস বিশেষ উৎসাহী।
এ কারণে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর জামাইয়ের নাম নিয়ে অনেকেই আপত্তি করেছিলেন। কিন্তু হস্তক্ষেপ করেন মোদি। গুজরাত ক্যাডারের ওই ওড়িয়া অফিসার সম্পর্কে উচ্চ ধারণা রয়েছে তার।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে এ সংস্থাটির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, ইন্টারনেট ও সোস্যাল মিডিয়ার উপর নজরদারিÑ এ সবই হলো ন্যাটগ্রিডের কাজ।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ কাজে প্রসাদের তুলনায় বেশি যোগ্য পট্টনায়েক। চিদম্বরম যখন ন্যাটগ্রিড তৈরি করেন, তখন ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন তৎকালীন গোয়েন্দাপ্রধান নেহচল সাঁধু। তার বক্তব্য ছিলÑ এই গ্রিড গঠনের অর্থ হচ্ছে আরও একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে সমান্তরালভাবে গড়ে তোলা। এতে দেশের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা আইবি-র গুরুত্ব কমবে।
তার পরিবর্তে ন্যাটগ্রিড একটি পাল্টা সংস্থায় পরিণত হবে। মন্ত্রিসভার নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটি ২০১১ সালে ন্যাটগ্রিডের জন্য ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রায় ৭০ জনকে নিয়োগও করা হয়। তবে নানা বিতর্কে ন্যাটগ্রিডের কাজ শুরু হয়নি। এর মধ্যে ২০১২-র জুলাইয়ে চিদম্বরম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্ব ছাড়েন।
মনমোহনের জামাইকে ন্যাটগ্রিডের প্রধান করার পিছনে অবশ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা অন্য ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। তারা বলছেন, বর্তমান গোয়েন্দাপ্রধান দিনেশ্বর শর্মা অবসর নিচ্ছেন ৩১ অক্টোবর। মোদি যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন গোয়েন্দাপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন আসিফ ইব্রাহিম। আসিফ ছিলেন ভারতের প্রথম মুসলিম গোয়েন্দাপ্রধান। তার পর দায়িত্ব নেন দিনেশ্বর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলছে, পদমর্যাদা অনুযায়ী ২০১৮ সালে আইবিপ্রধান হওয়ার দৌড়ে থাকতেন পট্টনায়েক। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা