বাড়ছে বন্যার পানি, প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক : টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে বেড়েছে যমুনা নদীর পানি, বইছে বিপদসীমার উপর দিয়ে। এতে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার চরাঞ্চল। পানিবন্দি কয়েক হাজার মানুষের যেন দুর্ভোগের সীমা নেই। তলিয়ে গেছে সিরাজগঞ্জের পাঁচ উপজেলার চর এলাকা।
লালমনিরহাটের ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার উপরে বইছে। এতে তলিয়ে গেছে সদর উপজেলার দুই ইউনিয়নের অন্তত ছয়টি গ্রাম। তিস্তা নদীর পানিও বইছে বিপদসীমার উপর দিয়ে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাতিবান্ধা, বোয়ালমারী, ডাওয়াবাড়ি, পাটাকিপাড়া চরাঞ্চলের প্রায় ৭ হাজার পরিবার।
এছাড়া, কুড়িগ্রাম সদর, নাগেশ্বরী, উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলায় পানিবন্দি, অন্তত ৮০ হাজার মানুষ। ডুবে গেছে ফসলি জমি, ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত নানা রোগ-বালাই।
অবিরাম বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে গাইবান্ধা জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, করতোয়া, ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঘাঘট নদীর পানি ২৩ সে.মি., ব্রহ্মপুত্র ১৮ সে.মি. ও করতোয়া ১২ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সবকটি নদীর পানি এখনও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে তিস্তা নদীর পানি ৪ সে.মি. কমছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা ও নদী ভাঙ্গনকবলিতদের মাঝে ৫০ মে. টন চাল, নগদ ৪ লাখ টাকাসহ ৪ লাখ টাকার শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
কুড়িগ্রামের দুধকুমর, গঙ্গাধর, ব্রহ্মপুত্র, ফুলকুমর, সংকোষ, ধরলা, তিস্তাসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমর, গঙ্গাধর, ব্রহ্মপুত্র, ফুলকুমর ও সংকোষ নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ। বন্যার্ত এলাকায় রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ৯টি উপজেলার বন্যার্তদের মাঝে ইতোমধ্যে সরকারিভাবে ১৯২ মে. টন চাল ও ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার বিতরণ চলছে। বরাদ্দসংকট হওয়ায় ত্রাণ না পাওয়ায় অসংখ্য বন্যার্তের বেড়েছে দুর্ভোগ।
নীলফামারীতে রোববার সকাল ৬টায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। শনিবার এবং রোববার বিকাল পর্যন্ত সরকারিভাবে বনার্তদের মাঝে ৩০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। শনিবার নীলফামারী জেলা ও ডিমলা উপজেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ২ হাজার পরিবারের মাঝে দুবেলা খিচুরি খাওয়ানো হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা ব্যারাজের সবকটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। কি পরিমাণ উজানের ঢল আসছে তা মনিটরিং করা হচ্ছে।
শেরপুর জেলায় প্রায় দুসপ্তাহের টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে ৫টি নদী-নালা দিয়ে প্রবল বেগে বন্যার পানি প্রবাহের ফলে বন্যা পরিস্থিতি আরও চরম অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। যে সব এলাকা নতুনভাবে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে সে সব এলাকাগুলো হলোÑ হাতিবান্দা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম, মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম, ঝিনাইগাতী ইউনিয়নের বহু এলাকাসহ আরও ৪টি ইউনিয়নের অনেক গ্রাম। পানিবন্দি পরিবার ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারের সহায়তা জরুরি দরকার বলে বন্যার্তদের দাবি।
এছাড়াও বাড়ছে পদ্মা নদীর পানিও। এতে ফরিদপুরের মধুমতি, কুমার, আড়িয়ালখাঁ ও চন্দনা নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। তলিয়ে গেছে এ অঞ্চলের বসত-ভিটা ও ফসলি জমি।
সুনামগঞ্জেও বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়ে পানিবন্দি সাত উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা