ঢাকার চারপাশের ৪ নদী দূষণমুক্ত করার দায়িত্ব পাচ্ছে নৌবাহিনী
বিপ্লব বিশ্বাস : রাজধানীর চারদিকের বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু- এ চারটি নদীকে দূষণমুক্ত করা ও দুষণ রোধের দায়িত্ব পাচ্ছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। ইতোমধ্যে নৌবাহিনী এ কাজের জন্য একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছে, যা নৌ মন্ত্রণালয় সংশোধিত কৌশলপত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে। এ কাজের জন্য নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ ও নৌ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি মনিটরিং ও কো-অর্ডিনেশন কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
গতকাল বিকেলে সচিবালয়ে নৌ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ‘ঢাকার চতুর্দিকের নদীসমূহের দখল ও দূষণরোধে পরিকল্পনা বাস্তবাায়নে কৌশলপত্র প্রণয়ন’ শীর্ষক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ কমিটি গঠিত হয়েছে।
নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের সভাপতিত্বে এ সভায় নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, নৌসচিব অশোক মাধব রায়, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামালউদ্দিন আহমেদ, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পরাগ বেগম, ঢাকা সিটি করপোরেশন, ঢাকা জেলা প্রশাসন, জাতীয় নদী কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জানানো হয়, ঢাকার এ চারটি নদী হচ্ছে বাংলাদেশের প্রাণ। এসব নদীর তলদেশে ১০ ফুটের বেশি পলিথিনসহ নানাধরণের বর্জ্য পড়ছে। এর মধ্যে ট্যানারি বর্জ্য, হাসপাতাল বর্জ্য, শিল্পবর্জ্যসহ পয়ঃবর্জ্য ফেলা হচ্ছে এই নদীতে। নদী দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে বড় বড় অবকাঠামো। ফলে নদী তার স্বাভাবিক চরিত্র হারিয়েছে। এটি উদ্ধার করতে হবে। প্রথমে এ নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করে পরে নদীগুলো যেন ভবিষ্যতে আর কেউ কোনোভাবে দূষিত হতে না পারে সে জন্য বাস্তব উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। এজন্য প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ না নিলে নদীগুলো মরে যাবে। যার প্রভাব ধীরে ধীরে দেশের অন্য নদীগুলোর মধ্যে পড়বে। এজন্য প্রয়োজনে লন্ডনের টেমস নদীসহ বিশ্বের যে সব নদী এভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে সেসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যেতে পারে। এ কাজের জন্য নৌবাহিনী তাদের কৌশলপত্রে একটি পৃথক টাস্কফোর্স গঠনেরও পরামর্শ দিয়ে এ টাস্কফোর্সের কর্মকান্ড মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে উপস্থাপনেরও পরামর্শ দিয়েছে।
সভায় নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, এটি একটি কঠিন কাজ। ঢাকার চারপাশের এই চারটি নদীকে দূষণমুক্ত করে নদীগুলোর স্বাভাবিক চরিত্র ফিরিয়ে আনা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ। নদীগুলো দখলমুক্ত করতে সাহসিকতার প্রয়োজন। এ জন্যই এ কঠিন কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। আমার বিশ্বাস, নৌবাহিনী মাঠে নামলে ফল যত তাড়াতাড়ি পাব, একজন সিভিলিয়ান কর্মকর্তার নেতৃত্বে এ দায়িত্ব পালন করতে গেলে সফলতা আসবে না। কারণ, দেশের বড় বড় রাঘব বোয়াল নদী দখল করে অবকাঠমো গড়েছে। এগুলো উচ্ছেদ করতে সাহস প্রয়োজন। এ সাহস নৌবাহিনীর আছে।
এ সময় তিনি নৌবাহিনীর দেওয়া কৌশলপত্রকে সংশোধিত কৌশলপত্র হিসেবে গ্রহণ করেন এবং নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডিমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে নৌমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রফিকুল ইসলামকে অন্তর্ভুক্ত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগের একজন করে প্রতিনিধি (যারা যুগ্ম সচিবের নিচে নয়) নিয়ে একটি মনিটরিং ও কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেন।