সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদ-এর উদ্বোধন সাতটি বিষয় বিবেচনা করে অফিসারদের পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রীর উপদেশ
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসারদের পদোন্নতি দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতটি বিষয় আমলে নিতে ও বিবেচনা করে আগামী এক বছরের জন্য অফিসারদের পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিতে উপদেশ দিয়েছেন। এই জন্য তিনি পদোন্নতির জন্য অফিসারদের পেশাগত দক্ষতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস, নেতৃত্বের গুণাবলী, শৃঙ্খলার মান, সততা, বিশ্বস্ততা ও আনুগত্য এবং সর্বোপরি নিযুক্তিগত উপযোগিতার উপর গুরুত্ব আরোপ করতে বলেন প্রমোশন বোর্ডকে। গতকাল রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়া প্রমোশন বোর্ডের সদস্যের প্রতি এই উপদেশ দেন।
সূত্র জানায়, এই প্রমোশন বোর্ড যে অফিসারদেরকে ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরের জন্য পদোন্নতি দিতে যোগ্য হিসাবে বাছাই করবেন। তারা প্রথমে ওই সব অফিসারদের কর্মকা-, নেতৃত্বের গুণাবলীসহ সবদিক বিবেচনা করে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য বাছাই করবেন। এরপর বৈঠকের শেষ দিনে বোর্ড অফিসারদের নাম চূড়ান্ত করবেন ও পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সুপারিশ করবেন। সেই সুপারিশ পাঠানো হবে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কাছে। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি অনুমদোন দিলে এই পদোন্নতির আদেশ কার্যকর করা হবে। যাদের পদোন্নতি দেওয়া হবে তাদের এই পদোন্নতি আগামী এক বছর ধরে প্রয়োজন, গুরুত্ব, অভিজ্ঞতা ও পদ শূন্য হওয়ার ভিত্তিতে সময় সময়ে কার্যকর করা হবে। আগামী বছর আবার একই সময়ে এই বোর্ড বসবে।
প্র্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার ঢাকা সেনানিবাসের সেনাসদর কনফারেন্স হল (হেলমেট)-এ সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদ-২০১৬’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের পদোন্নতির লক্ষ্যে পাঁচ দিনব্যাপী ২৪-২৮ জুলাই আয়োজিত এ পর্ষদের কার্যক্রম শুরু হল। এ পর্ষদের মাধ্যমে কর্নেল থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল থেকে কর্নেল পদবিতে পদোন্নতির জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত এ পর্ষদের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর ভবিষ্যৎ জ্যেষ্ঠ নেতৃত্বের জন্য যোগ্য ও দক্ষ অফিসারগণ সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে পদোন্নতি পাবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও দেশপ্রেমিক যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে বের করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। সেই সঙ্গে তাদেরকেই পদোন্নতি দিতে পরামর্শ দিয়েছেন প্রমোশন বোর্ডকে। বলেছেন, একটি দেশের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত এবং সুসংহত করতে একটি সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, যারা সুশিক্ষিত, কর্মক্ষম, সচেতন, বুদ্ধিমান এবং সর্বোপরি গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ের অধিকারী-এমন যোগ্য অফিসারদের কাছে নেতৃত্ব ন্যস্ত করতে হবে।
আপনাদেরকে সব কিছুর ঊর্ধ্বে থেকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার বিশ্লেষণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশপ্রেমিক যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে বের করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী এই বছরের পদোন্নতি দেওয়ার জন্য একটি মাপকাঠিও ঠিক করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর অফিসারদের পদোন্নতির জন্য সাতটি বিষয় বিবেচনায় নিতে বলেছেন। এরমধ্যে তিনি যে সব বিষয় তুলে ধরেছেন, সেখানে বলা হয়েছে, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণ বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে আপনারা যোগ্য ব্যক্তিকে পদোন্নতির জন্য নির্বাচন করছেন। পদোন্নতি প্রদানের সময় আপনাদের কতিপয় বিষয় বিশেষ বিবেচনায় নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী যে সাতটি বিষয় বলেছেন এরমধ্যে রয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস, নেতৃত্ব, পেশাগত দক্ষতা, মাঠের তৎপরতা বিচার, শৃঙ্খলা, সততা, বিশ্বস্ততা ও আনুগত্য, নিযুক্তিগত উপযোগিতা এবং গ্রহণযোগ্যতা।
তিনি এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখার পাশাপাশি বলেছেন, বর্তমান সরকারের আমলে যখনই প্রয়োজন হয়েছে তখনই সেনাবাহিনী জনগণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য যোগ্য, দক্ষ, কর্মক্ষম এবং দেশপ্রেমিক অফিসারদের হাতে এর নেতৃত্ব ন্যস্ত করতে হবে। দেশের অভ্যন্তরের বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সেনা সদস্যদের ভূমিকা স্মরণ করেন। বলেছেন, তাদের সেই কাজ জনগণের কাছে প্রশংসিত হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী সুনাম পেয়েছে। দেশের যেকোনো সংকটময় মুহূর্তে সেনাবাহিনী সর্বদা পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে।
গুলশান হামলার ঘটনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর সেখানে অভিযান চালিয়ে ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধারের ঘটনারও প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষ পরিকল্পনায় মাত্র ১২ মিনিটের মধ্যে এ অভিযান সম্পন্ন করায় আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বাংলাদেশে সেনাবাহিনী জাতিসংঘে শান্তি রক্ষা মিশনে যে ভূমিকা রাখছে এই বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ শীর্ষ সেনা প্রেরণকারী দেশ, যা পুরো জাতির জন্য বিরল সম্মান বয়ে আনছে। আমাদের সৈনিকদের শৃঙ্খলা, দক্ষতা ও কর্তব্যবোধে দৃঢ় মনোভাব বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর সেনাবাহিনীকে আরও কার্যক্ষম ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে নতুন পদাতিক ডিভিশন ও ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কোরের আধুনিকায়নের জন্য অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জাম কেনা হয়। বর্তমান সরকারের আমলে সেনাবাহিনীর সকল পর্যায়ে প্রশিক্ষণের অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ যে বিভিন্ন স্থাপনা নিমাণ করছে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্লাইওভার এবং ওভারপাসসহ সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ করছে এই ব্যাপারে সেনাবাহিনীর প্রশংসাও করেন। এবং তাদের মাধ্যমে অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হচ্ছে বলেও মন্ত্রব্য করেন। পাশাপাশি তিনি সেনাবাহিনীর জন্য নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন। এছাড়াও বান্দরবানের রুমায় পূর্ণাঙ্গ সেনানিবাসের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া, কক্সবাজারের রামুতে সেনানিবাস স্থাপনের কাজ শুরু, নবগঠিত কম্পোজিট ব্রিগেডের আবাসনের লক্ষ্যে পদ্মা সেতুর দুই পাশে সেনানিবাস গড়ার প্রকল্পের কথাও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী সেনাসদরে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক । এছাড়া উক্ত অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক (অবঃ), প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো: আবুল কালাম আজাদ এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত কর্মকর্তাদের সাথে ফটোসেশনে যোগ দেন। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম