পেছনে ফেরার মতো স্বর্ণযুগ নেই তারপরও আমেরিকা মহান দেশ
ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বৃহস্পতিবার তার দীর্ঘতম বক্তৃতা দিয়েছেন রিপাবলিকান কনভেনশনে। তার বক্তৃতার সারবস্তু থেকে স্বরের উচ্চতা ছিল বেশি। তবুও গণমাধ্যমে এটি ব্যাপক প্রচারিত। ট্রাম্প তার বক্তৃতায় আমেরিকার একটা চিত্র তুলে ধরতে চেয়েছেন। অন্ধকার ও বেদনাক্লিষ্ট আমেরিকার চিত্র। সাম্প্রতিককালে দেওয়া যে কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর চেয়ে তিনি বেশি গাঢ় করে আমেরিকার এ চিত্র আঁকতে চেয়েছেন।
ট্রাম্পের বক্তৃতাকে ১৯৬৮ সালের রিচার্ড নিক্সনের বক্তৃতার সঙ্গে তুলনা করার চেষ্টা হয়েছে। অনুমান করুন, ট্রাম্প নিক্সনের মতো করে বলছেন, আমরা কাজ করবো একটি মুক্ত দুনিয়া বিনির্মাণের লক্ষ্যে। উন্মুক্ত আকাশের জন্য, খোলা শহরের জন্যে, অবারিত হৃদয়ের জন্যে এবং খোলা মনের জন্যে। অথবা আসুন আমরা আমেরিকার সম্পদ বাড়াই যাতে আমরা বয়স্কদের জন্য বেশি করে সহানুভূতিশীল হতে পারি, বিপন্নদের জন্য এবং যারা নিজেদের সহায়তা করতে অক্ষম তাদের জন্য বাড়তি কিছু করতে পারি। আর, অবশ্যই ১৯৬৮ সাল ছিল আন্তর্জাতিক সংকটের তুঙ্গ সময়। আমেরিকা আর সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। ্ওই সময় উৎপাদন হয়েছে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র। দুই পরাশক্তির ছায়াযুদ্ধে মিত্রতার পরিবর্তন হচ্ছে বারবার। ভিয়েতনামে তখন আমেরিকার প্রায় ৫ লাখ সেনা সদস্য, প্রতি সপ্তাহে গড়ে মারা যাচ্ছে ৩শ জন করে। যুদ্ধ ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে। ওই সময় দেশের দুজন প্রথিতযশা নেতার প্রাণ গেছে আততায়ীর হাতে। রবার্ট কেনেডি এবং মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। লুথার কিং-এর মৃত্যুতে বর্ণবাদী দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে কম পক্ষে একশ আমেরিকান শহরে। অপরাধ বাড়তে থাকে নাটকীয়ভাবে।
আমেরিকার আজকের সমস্যা অন্য রকম। আমেরিকা ২০০৯ সালের মহামন্দা থেকে বের হয়ে আসে অন্যান্য প্রধান অর্থনীতি থেকে ভালোভাবে। ২০১০ সালে দেশটি এক কোটি ১৪ লাখ লোকের কর্মসংস্থান করে। এ সংখ্যা ৩৫টি উদীয়মান অর্থনীতির সমান। অর্থনীতির এ প্রবণতার উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বারাক ওবামা যখন ক্ষমতায় আসেন তখন মটরগাড়ি বিক্রি হতো গড়ে প্রতিবছর ৯৬ লাখ। গত বছর এ হিসাব দাঁড়িয়েছে বছর প্রতি ১ কোটি ৬৬ লাখ। গত আট বছরে আমেরিকা বিশ্বের সবচেয়ে বড় জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদকে পরিণত হয়। অতিক্রম করে রাশিয়া ও সৌদি আরবকে। আমেরিকায় এখন বেকারের হার ৫ শতাংশের নিচে। আর মহামন্দা পার হওয়ার পর মেক্সিকো থেকে আমেরিকায় অভিবাসন এখন প্রায় বন্ধ।
তবে একথা বলতে হয়, পেছনে তাকিয়ে দেখার মতো স্বর্ণযুগ আমেরিকার নেই। ১৯৫০-এর দশকে সর্বোচ্চ কর হার ছিল ৯১ শতাংশ। অনেক অঙ্গরাজ্যে নারীরা চাইলেই ডাক্তার বা আইনজীবী হতে পারতেন না। আফ্রিকান-আমেরিকারা একই কাউন্টার থেকে শ্বেতাঙ্গদের সঙ্গে লাঞ্চ নিতে পারতেন না। ১৯৬০ দশকে আমেরিকা যুদ্ধ ও সংকটকাল অতিক্রম করছিল। ১৯৭০-এর দশকে স্থবিরতা ও মূল্যস্ফীতি সাধারণ আমেরিকানদের আয় ও সুযোগবঞ্চিত করে রেখেছিল।
তার পরও আমেরিকা মহান। এটা মুক্তচিন্তা, বৈচিত্র্য, সহনশীলতা ও উদ্ভাবনের লীলাভূমি। অবশ্যই এ দেশের সমস্যা আছে। যেমন আছে বিশ্বের সব দেশের। অবশ্যই আমেরিকা মহত্ত্বর হতে পারে। তবে রাগ, ঘৃণা, বিভক্তি এবং দুঃখবোধের কাছে সমর্পিত হলে তা সম্ভব হবে না। সিএনএন থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ