
হাসান খালেদ নিখোঁজ
জাফর আহমদ ও সুজন কৈরী : ডাচ-বাংলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট হাসান খালেদ নিখোঁজ হয়েছেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শনিবার সকালে নাস্তার আগে ওষুধ কিনতে বের হয়ে হাসান খালেদ বাসায় ফেরেননি। সারাদিন খোঁজ-খবর করে না পেয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় তার শ্যালক শরিফুল ইসলাম ধানমন্ডি থানায় জিডি করেন। ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আযম জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। ব্যবসায়িক মন্দার কারণে হাসান খালেদ ‘ডিপ্রেশনে’ ছিলেন।
ব্যবসায়ীর শ্যালক শরীফুল আলম এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, তার ভগ্নিপতি সদালাপী ও নিরহংকারী মানুষ। তার কোনো শত্রুও ছিল না। এছাড়া কোনো ধরনের হুমকিও পাননি তিনি। ঘটনাটি র্যাব-পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো হয়েছে।
রমনা জোনের ডিসি মারুফ হাসান সরদার বলেন, হাসান খালেদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। তাকে খুঁজে বের করার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি মাতলুব আহমাদ এ বিষয়ে বলেন, এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে আমরা পুলিশ ও পরিবারের কাছে থেকে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছি। খোঁজ-খবর নেওয়ার পর বলা যাবে। বাসার বাইরে বের হয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া কিংবা কোনো কারণে মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যাওয়া বা অন্য কোনো কারণেও যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে যেতে পারে। পুলিশ খোঁজ-খবর নিচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তৈরিপোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহসভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেন, হাসান খালেদ ব্যক্তিগতভাবে আমার পরিচিত। হাসান খালেদকে দুদিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে না- এ ব্যাপারে একটি বার্তা পেয়েছি। কিন্তু তার ব্যাপারে আরো তথ্য সংগ্রহ করে কথা বলা যাবে।
হাসান খালেদ ডাচ-বাংলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিবিসিসিআই) সভাপতি। তিনি তৈরি পোশাক ‘ক্রোকোডাইল’ ব্রান্ডের স্থানীয় পরিবেশক। রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিতে তার একটি শোরুম আছে। এছাড়াও তার ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট এবং অ্যাগ্রো ও ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি আছে। রাজধানীর কমরেড মেনন রোডে (ইস্কাটন) একই ভবনের ভিন্ন দুটি ফ্লোরে ডিবিসিসিআই এবং তার নিজের প্রতিষ্ঠান ‘নিউইরা’র অফিস রয়েছে।
গতকাল বিকেলে তার অফিসে গেলে দেখা যায়, বাইরে থেকে তালা লাগানো। তার কর্মচারীরাও অফিসে নেই। আশপাশের অফিসের কেউ কিছু বলতে পারেননি। ডিবিসিসিআই কার্যালয়ে গেলে অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম চৌধুরী দিদার জানান, এ ব্যাপারে আজকে আমরা জেনেছি। বোর্ড মেম্বারদের জানানো হচ্ছে, তারা বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে কবে বৈঠকে হবে তা তারা জানেন না।
এ ব্যাপারে ডাচ-বাংলা চেম্বারের সহসভাপতি আতিকুল হক বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে তার ব্যবসা মন্দা যাচ্ছিল। এ কারণে তিনি ‘ডিপ্রেশনে’ ছিলেন। এজন্য মাঝেমধ্যে তিনি মন খারাপ করতেন।
হাসান খালেদের প্রতিষ্ঠান ‘নিউইরা’র ম্যানেজার মুরাদ হোসেন জানান, ঢাকায় নেদারল্যান্ডস থেকে আমদানি করা পণ্যের মেলা করছে ডাচ-বাংলা চেম্বার। এ মেলার মধ্য দিয়ে পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির পরিকল্পনা ছিল হাসান খালেদের। কিন্তু দেশের সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে তিনি চিন্তিত ছিলেন। এ অবস্থায় দর্শক পাওয়া যাবে কি না এবং কিভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে-এ ব্যাপারে তিনি চিন্তিত ছিলেন। গতকাল রোববার হাসান খালেদের কমরেড মেনন রোডের (ইস্কাটন) অফিসে গেলে অফিস বন্ধ পাওয়া যায়। পরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এ কথা বলেন।
এদিকে, হাসান খালেদের বসুন্ধরা মার্কেটের শোরুমে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সেখানে তার কর্মচারী জসিম উদ্দিন বসে আছেন। গত শনিবার নিখোঁজ হলেও তিনি বিষয়টি জেনেছেন গতকাল রোববার। জসিম জানান, দেশের বাইরে গেলে তিনি অনেক সময় কাউকে না জানিয়ে গেলেও তাকে বলে যান। কিন্তু নিখোঁজের ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। টেলিভিশন দেখে জানতে পারেন, হাসান খালেদ নিখোঁজ।
