জঙ্গিদের বিচারের নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায়নি ৩ বছরেও!
রবিউল আলম
জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের আন্তরিকতার কোনো অভাব আমি দেখিনি। দেশে জঙ্গিবাদ সমর্থন, লালন-পালন ও প্রতিষ্ঠা
করতে চায় এমন জনসংখ্যা হাতে গোনা। কিছু লোক, যারা দেশের সম্মান অন্যের কাছে বিক্রি করে নিজেদের আখের গোছাতে চায়, অশান্তি সৃষ্টি করে ক্ষমতায় যেতে চায়, যারা জনগণের কাছে যেতে ভয় পায়, যাদের জনসমর্থন নেই তারাই উল্টোপথের পথিক। দেশকে পিছিয়ে দিতে চায় তারা হাজার বছর।
প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘাপটি মেরে থাকা এইসব বেঈমানদের জন্য তিন বছর হতে চলেছে জঙ্গিবাদের বিচার আজও শুরু করা যাচ্ছে না। সরকারি প্রধান কৌশলী আব্দুল্লাহ আবু বলেছেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত তিনটি জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতার বিচারের অনুমতি মিলছে না।
আইন মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনোটির জন্য তিন বছরও গড়িয়েছে। ভাবতে অবাক লাছে, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসিমউদ্দিন রাহমানী, জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের প্রধান মাওলানা সাইদুর রহমান ও হিযবুত তাহরীর প্রধান সমন্বয়ক মহিউদ্দিনকে আরজ ও বিচারের আওতায় আনা যায়নি, তার উপর মহিউদ্দিন জামিন নিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিচার শুরুর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এ ধরনের কোনো চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেনি।
আমরা কোথায় আছি? জঙ্গি দমনে আদালতের দফায় দফায় চিঠিগুলো কোথায় গেল, কারা এই চিঠি নিয়ে রাজনীতি করছে, কারা জঙ্গিবাদিদের বিচারে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি করছে, তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।
তিন জঙ্গির অন্যতম জসিমউদ্দিন রাহামানীকে আমি একসময় চিনতাম। রায়ের বাজার হাতেমবাগ মসজিদের ইমাম ছিলেন, পরে বছিলা রোডে দানকৃত সম্পত্তিতে একটি মাদ্রাসা ও মসজিদ নির্মাণ করে সে। এলাকার কিছু যুবকদের নিয়ে জঙ্গিবাদে উৎসাহিত করে, পরে বরগুনায় গ্রেফতার হন। আমাদের গোয়েন্দা বাহিনী অবশ্যই ধন্যবাদ প্রাপ্য একজন ইসলামের অপব্যাখ্যাকারী, দেশদ্রোহী তথাকথিত মাওলানা জসিমউদ্দিনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন, অনেক যুবককে এই অপশক্তির হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছেন। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, অনেক জসিমউদ্দিনের অনুসারী আত্মগোপনে চলে গেছেন। কেউ দোকানদার, ফেরিওয়ালা, রিকশা চালায়, কিন্তু গোপনে গোপনে জঙ্গিবাদের প্রচার চালায়, বেশিদিন এক জায়গায় অবস্থান করে না।
অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। এই জঙ্গিদের বিচারের মাধ্যমে যত তাড়াতাড়ি শাস্তি দেওয়া যায় ততই মঙ্গল। কারণ এই জঙ্গি নেতারা জেল খানায় থেকেও জঙ্গিবাদ প্রচারে সক্ষম। ওদের হাত অনেক লম্বা, তা না হলে দফায় দফায় আদালতে আবেদন করে, তিন বছরেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পৌঁছায়নি, আমরা কি ভাবতে পারি এ কথা।
লেখক : মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন