ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর আঙ্কারার পররাষ্ট্রনীতিতে নাটকীয় মোড়
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর আঙ্কারার পররাষ্ট্রনীতি নাটকীয় মোড় নিচ্ছে। রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কের ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক উন্নয়নের কারণে সমস্যার মুখে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র। আঙ্কারার সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে তুরস্কে সংঘটিত ব্যর্থ অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে আরো তিক্ত হয়ে উঠেছে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক। মার্কিনিদের আশ্রয়ে থাকা তুরস্কের স্বেচ্ছানির্বাসিত ধর্মগুরু ফেতুল্লাহ গুলেনকে কেন্দ্র করেই যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে তুরস্ক। তুর্কি কর্তৃপক্ষ দেশটির অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার জন্য সম্পূর্ণ দায় চাপাচ্ছে ফেতুল্লাহ গুলেনের ওপর এবং তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য মার্কিন সরকারের প্রতি বারবার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু মার্কিন কর্তৃপক্ষ সে আহ্বানে সাড়া না দেয়ায় রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের দিকে ঝুঁকছে তুরস্ক। আরটিএনএন
রাশিয়ার স্পুটনিক নিউজ তুরস্কের দৃষ্টিভঙ্গির এই পরিবর্তনকে আকস্মিক ও নাটকীয় বলে অভিহিত করেছে। এক প্রতিবেদনে স্পুটনিক জানায়, পশ্চিমাদের থেকে ক্রমেই দূরে সরা এবং রাশিয়ায় ইরানের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার দিকে ঝুঁকছে তুরস্ক। এমনকি এতদিন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার-আল- আসাদের তীব্র বিরোধিতাকারী তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানও এখন বিপরীত অবস্থান নেয়ার কথা ভাবছেন।
তুর্কি পররাষ্ট্রনীতির নাটকীয় পরিবর্তনে সুসম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে সিরিয়ার সঙ্গেও। আঞ্চলিক ইস্যুর চেয়ে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে অধিক চাঙা করে তোলার লক্ষ্যে এরদোগান নতুন পররাষ্ট্রনীতির দিকে ঝুঁকছেন বলেও মনে করা হচ্ছে।
কয়েক বছর ধরেই দেশটির উদীয়মান অর্থনীতি ক্রমেই চাপের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে সিরিয়া এবং ইরাকে সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর পর তুরস্কের অর্থনীতি আরো খারাপ হতে থাকে। এবার নিজেদের অর্থনৈতিক বিকাশ ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে নতুন পররাষ্ট্রনীতির কথাই ভাবছে দেশটি।
এ সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবেই রাশিয়ার প্রতি নিজেদের মনোভাব পুনর্বিবেচনা করেছে তুরস্ক। সিরিয়ার মাটিতে আইএসবিরোধী অভিযানের সময় রাশিয়ায় একটি বিমান ভূপাতিত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি রাশিয়ার কাছে সুর নরম করেছে তারা। যদিও বিমান ধ্বংসের পর থেকে দু’দেশই কঠোর অবস্থানে চলে গিয়েছিল। এখন দুদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে এলে ‘স্টিম প্রজেক্ট’কে স্বাগত জানাবে আঙ্কারা।
রাশিয়া থেকে ইউরোপের দেশগুলোতে গ্যাস সরবরাহের এই পাইপলাইনটি এতদিন পশ্চিমাদের ইচ্ছানুযায়ী বন্ধ করে রেখেছিল তুরস্ক। আঙ্কারা এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে তুরস্ক হয়ে রাশিয়ায় গ্যাসের লাইন সরাসরি গ্রিস পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
এই প্রজেক্টটি চালু হলে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার নির্ভরতা কমে যাবে। একইসঙ্গে তুরস্কও অর্থনৈতিকভাবে অনেক লাভবান হবে। স্বল্পমূল্যে রাশিয়ার গ্যাস দিয়ে নিজেদের চাহিদা মেটাবে তুর্কিরা।