মমিনুল ইসলাম : কেউ যদি সমকামী হয় তাহলে তাকে ভবনের ওপর থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হবে। চুরি করলে হাত কেটে ফেলা হবে। মদ পান করলেও রয়েছে শাস্তি। আর যদি কেউ ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাহলে তার শাস্তি হচ্ছে গলা কেটে তার মৃতদেহ প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে রাখা। এসব শাস্তির কথা একটি পোস্টারে লিখে টাঙিয়ে রাখে আইএস জঙ্গিরা। বিবিসি।
পোস্টারটিতে আরও লেখা রয়েছেÑ আল্লাহকে কেউ অভিশাপ দিলে তার শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদ-। নবীকে কেউ অভিশাপ দিলে তার শাস্তি মৃত্যুদ-। ইসলামকে কেউ অভিশাপ দিলে তার শাস্তি মৃত্যুদ-। বিয়ে বহির্ভূত যৌনতায় লিপ্ত হলে সে যদি বিবাহিত হয় তাহলে তার শাস্তি মৃত্যুদ-, অবিবাহিত হলে ১শ দোররা। সমকামী হলে উভয়ের শাস্তি মৃত্যুদ-। চুরির শাস্তি পা কেটে দেওয়া। মদ খেলে ৮০টি দোররা। মিথ্যা যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনলে ৮০টি দোররা। ধর্মত্যাগ করলে মৃত্যুদ-। মহাসড়কে ডাকাতি করলে বা ডাকাতির সময় কাউকে হত্যা করলে ক্রুশে ঝুলিয়ে হত্যা। অধার্মিকদের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করলে মৃত্যুদ-। সিরিয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে অব্যাহতভাবে পিছু হটছে তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিরা। যতই তারা পিছু হটছে ততই বেরিয়ে আসছে তাদের শাসনব্যবস্থার নমুনা। তাদের দ-বিধিতে রয়েছে একেক অপরাধের একেক রকম শাস্তি।
সম্প্রতি দেশটির উত্তরাঞ্চল থেকে পালিয়ে গেছে জঙ্গিরা। এখানে একটি পরিত্যক্ত স্কুলে একটি বড় আকারের পোস্টার পাওয়া গেছে। যেখানে কি ধরনের অপরাধের জন্যে কি শাস্তি তার বিধান লেখা রয়েছে। এতে বলা হয়েছেÑ
ওই পরিত্যক্ত স্কুলের ভেতরে ঘুরে দেখতে সক্ষম হয়েছেন বিবিসির একজন সংবাদদাতা জিয়ার গল। কুর্দি যোদ্ধাদের সাথে তিনি ওই স্কুলের ভেতরে ঘুরে দেখেছেন। তাদের আক্রমণে মানবজ প্রদেশ থেকে আইএস জঙ্গিরা পালিয়ে গেছে। কিছুদিন আগেও এই স্কুলটি চালাতো ইসলামিক স্টেট।
স্কুলের ভেতরে ঢুকে তিনি প্রথমে যে ক্লাসে গেলেন সেটি ছিল শিল্পকলা বা আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটসের। সেখানে তিনি দেখতে পান মেঝেতে পড়ে আছে কাগজ দিয়ে তৈরি কিছু মানবদেহ। এগুলোর আকারও মানুষের সমান। ধারণা করা হচ্ছে, এর উদ্দেশ্য আইএসের ওপর বিমানহামলার সময় চালকদের বিভ্রান্ত করা। যাতে এসবের ওপর বোমা ফেলা হয়। স্কুলের রান্নাঘরের দরজায় রুশ ভাষায় লেখাÑ কিচেন।
এ ব্যাপারে জিয়ার গল বলেন, এ স্কুলে রুশ ভাষায় তিনি আরও অনেক লেখা দেখেছেন। যা থেকে ধারণা করা যেতে পারে যে, জঙ্গিদের অনেকে হয়তো চেচেন। ফরাসি ভাষায়ও রয়েছে কিছু নাম লেখা। আছে ইংরেজিতে লেখা নামও। হয়তো তারা ইংরেজি ও ফরাসিভাষী দেশ থেকে সিরিয়ায় গিয়ে ইসলামিক স্টেটে যোগ দিয়েছে।
এক জায়গায় আরবিতে স্প্যানিশ ফুটবল ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের নাম লেখা। আরেকটি শ্রেণিকক্ষে দেখা গেছে, সেখানে পদার্থবিদ্যা পড়ানো হতো। সাদা বোর্ডে লেখা ছিল গণিতের কিছু সূত্র ও সমীকরণ। স্কুলে ফেলে যাওয়া যেসব বই পাওয়া গেছে সেগুলোর বেশিরভাগই আরবিতে লেখা, কুরআনসংক্রান্ত ধর্মীয় বই। পাওয়া গেছে সামরিক শিক্ষার পুস্তকও। বোমাহামলার সময় কোথায় কিভাবে আশ্রয় নিতে হবে তার বর্ণনা রয়েছে সেখানে। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ