জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া তরুণ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অর্থের সন্ধান করছেন গোয়েন্দারা
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যাওয়ার জন্য যারা ঘর ছাড়ছে তারা কেবল খেলাফত ও জিহাদী চেতনা থেকে ঘর ছাড়ছে না। এই কাজে যোগ দেওয়ার বিনিময়ে মোটা অংকের টাকা পাচ্ছে। ওই টাকা তরুণরা নিচ্ছে তাদের পরিবারের সব সদস্যদের আজীবন আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। তবে ওই টাকা কোথায় কিভাবে লেনদেন হচ্ছে সেই ব্যাপারে ধরা পড়া জঙ্গিরা স্পষ্ট করে কিছু বলছে না। জানিয়েছে তারা না থাকলে পরিবারের সদস্যরা টাকা পাবে কেমন করে তা তারা বলতে পারে না। জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার কারণে তারা কেবল জিহাদী চিন্তা-ভাবনা থেকেই গিয়েছে না কি কোনো কারণে এ ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য বের করার চেষ্টা করে। এব্যাপারে কোনো কোনো জঙ্গি বলেছে, প্রথমত: তারা জিহাদী দিক বিবেচনায় ও মারা গেলেও শহিদ হবে এবং বেহেশতে চলে যাবে, সেই জন্য এই দিকে যাচ্ছে ও কাজ করেছে। তারা বাংলাদেশে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এই জন্য তারা কাজ করছে।
এই ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা শুনেছি জঙ্গিবাদে জড়ানোর জন্য তারা টাকা পেয়ে থাকে। সেই সব টাকা ও এর উৎস বের করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দাদের যারা এই ব্যাপারে কাজ করছেন তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আমরা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের জন্য যে অর্থায়ন হচ্ছে তা বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু ইতোমধ্যে যেগুলো লেনদেন হয়েছে তা চিহ্নিত করা ও যারা করেছে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
এই ব্যাপারে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশে আইএস-এর কোনো সক্রিয় নেতা নেই যারা কর্মী সংগ্রহ করে এবং তাদেরকে যুদ্ধে নিয়ে যায়। কিন্তু তাদের কাছে বিভিন্ন দিক থেকে বার্তা আসে ওই বার্তার মাধ্যমে জিহাদী কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ হয়। এছাড়া দেশের যেসব তরুণ আইএস-এর কাজে কিংবা জঙ্গিবাদে উৎসাহিত হচ্ছে সেই সব তরুণ মোটা অংকের টাকাও পেয়ে থাকে। এর বিনিময়ে তারা কেউ কেউ লেখাপড়া করছে ও পরিবারের খরচও সরবরাহ করেছে। তারা পরিবারের সদস্যদের কাছে বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো কিংবা দেশের কারও মাধ্যমে টাকা পাবে সেই ধরনের খবর পাঠায়। এরপর পরিবারের সদস্যরা ওই টাকা পেয়ে যায়।
জঙ্গিদের কাছে এই ব্যাপারে জানার চেষ্টা করেছেন এমন একটি সূত্র জানায়, জঙ্গিদের অনেকেই লোভে পড়ে জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে। তাদেরকে জিহাদী কাজের কথা ছাড়াও বলা হয় তারা খেলাফত প্রতিষ্ঠায় শরিক হলে তাদেরকে কোটি টাকা দেওয়া হবে। সারাজীবন নিশ্চিত বসে খেতে পারবে। আজ না হোক একদিন এখানে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে সফল হবে। এই সফলতা আনার জন্য সে পরিবার ছেড়ে চলে গেলেও যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেই জন্য সব দায়িত্ব নেওয়া হবে। সব ধরনের খরচও বহন করা হবে। এছাড়াও তাদেরকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য সব খরচ বহন করা হবে। যেকোনো ধরনের বিপদ হলেও দেখভাল করা হবে। অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গেই সব হবে কেউ কিছুই সন্দেহ করবে না।
সূত্র জানায়, জঙ্গিরা কেউ কেউ জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, তারা কিভাবে টাকা পেয়েছে। ওই টাকার মূল উৎস খোঁজার জন্য গোয়েন্দারা কাজ করছেন। সন্দেহজনক ব্যাংক হিসাবে লেন দেনের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। সূত্র জানায়, এই পর্যন্ত যে সব জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের কারও নামে সন্দেহজনক কোনো লেনদেন হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোটি কোটি টাকার কথা অনেক সময় বলা হলেও প্রকৃত পক্ষে কত টাকা লেনদেন হয়েছে ও কারা করেছে তা বের করে এরপর জঙ্গিবাদে অর্থ দিয়ে সহায়তাকারীদের ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিতে চাইছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার পেছনে কেবল জিহাদী ও খেলাফত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন কাজ করছে তা নয়। তারা কাজের জন্য মোটা অংকের অর্থ পায় বলেও ধারণা করা হচ্ছে। সেই সব অর্থের হদিস খোঁজা হচ্ছে। এই অর্থ বিপুল পরিমাণ হতে পারে বলে ধারণা করা হলেও কোথায় রাখা হয়েছে তা বের করা জরুরি। এই জন্য আগামীতে প্রয়োজনে জঙ্গিবাদে নাম লিখিয়েছে ওই সদস্যদের নিজের নামে, তার পরিবারের ও তাদের নামে বেনামে অন্য কোনো হিসাবে টাকা লেনদেন হয়েছে কিনা তাও বের করার চেষ্টা চলছে। আত্মীয়-স্বজনদের কারও নামে অর্থ লেনদেন হয়েছে কিনা সেটাও দেখা হচ্ছে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম