গুলশানে জঙ্গিহামলা মূল নাটের গুরু শিক্ষক হাসনাত রেজা
সন্দেহের বাইরে থাকার জন্য স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে যান ওই রেস্টুরেন্টে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামের একডজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ
বিপ্লব বিশ্বাস : গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার মূল নাটের গুরু নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিম। তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী আরও তিনটি ভয়াবহ হামলার হাত থেকে রক্ষা পায় দেশ। পুলিশের সঠিক পদক্ষেপ, গোয়েন্দা কার্যক্রম এবং চৌকষ অভিযানের ফলে ধরা পরে বেশ কিছু জঙ্গি সদস্য। ওই সূত্রটি আরও দাবি করে, হাসনাত করিমের নেতৃতেই হামলা ও বিদেশিদের হত্যা করা হয়। তার সঙ্গে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামের প্রথম সারির কমপক্ষে একডজন নেতার সঙ্গে যোগযোগ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাদেরই হাত রয়েছে এই হামলার পেছনে। ইতোমধ্যে তাদের শনাক্ত করেছে গোয়েন্দারা।
এদিকে, গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হামনাত করিম পুলিশ হেফাজতে আছেন। সন্দেহ থেকে তাকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়।
সূত্র জানায়, হলি আর্টিজানে বিপুলসংখ্যক বিদেশি নাগরিক অবস্থান করছেন- এমন তথ্য জানিয়ে ‘থ্রিমা’ নামক মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে হাসনাত রেজা হামলার জন্য যেতে বলেন তাদের। হাসনাতের গ্রিন সিগন্যাল (সবুজ সংকেত) পেয়েই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ভাড়া করা ফ্ল্যাট থেকে সরাসরি হলি আর্টিজানে যায় হামলাকারী জঙ্গিরা। আর হাসনাতকে যাতে কেউ সন্দেহের মধ্যে না আনতে পারে সেজন্য তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি সন্তানের জন্মদিন পালনের কথা বলে সবাইকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন।
মামলার তদন্তের সঙ্গে জড়িত একাধিক সূত্র বলেন, গুলশানে হামলার তিন দিন আগে বসুন্ধরার ই-ব্লকের ছয় নম্বর রোডের তিন নম্বর টেনামেন্ট ভবনের ৬/এ নম্বর ফ্ল্যাটে পাঁচ জঙ্গিকে পাঞ্জাবি পরিয়ে হাতে অস্ত্র দিয়ে ছবি তুলে রাখা হয়। একটি পাঞ্জাবি একে একে পাঁচজনকে পরানো হয়। একইভাবে একটি অস্ত্রই তাদের হাতে দেওয়া হয়। যিনি ওই জঙ্গিদের কথিত ‘আইএস’ সাজিয়ে ছবি তুলেছেন, তার ব্যাপারেও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া এই হামলা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল বলে নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা। তদন্ত সূত্র জানায়, হামলাকারী জঙ্গি ও তাদের সহযোগীদের জন্য মে মাসে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রোভিসি (সাময়িক বরখাস্তকৃত) এসএম গিয়াস উদ্দিন আহসানের ফ্ল্যাট ভাড়া করে দিয়েছিলেন হাসনাত। হামলার আগে ওই বাসাতেই সহযোগীদের সঙ্গে জঙ্গিরা অবস্থান করে। সেখানে তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেছিলেন হাসনাত। হামলা সফলভাবে সম্পন্ন করতে জঙ্গিদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়ার কাজটিও করেন তিনি। দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে, চলতি বছরের এপ্রিলে গুলশান হামলার পরিকল্পনা করা হয়। এরপর মাঠ পরিকল্পনাকারীরা নিবরাস ইসলাম, রোহান ইমতিয়াজ, মীর সামীহ মুবাশীর, শরিফুল ইসলাম উজ্জ্বল ওরফে বিকাশ, খায়রুল ইসলাম পায়েল, আবীর রহমান, শফিকুল ইমলামসহ কয়েকজনকে মগজধোলাই করে প্রশিক্ষণ দিতে ঝিনাইদহ ও গাইবান্ধায় নিয়ে যায়। সেখানে প্রশিক্ষণ শেষে তাদের দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। একটি অংশকে দায়িত্ব দেওয়া হয় গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলা করতে; আরেকটি অংশ শোলাকিয়ায়।
সূত্র জানায়, হামলার আগে জঙ্গিরা বেশ কয়েকদিন হলি আর্টিজানে খাওয়া-দাওয়া করে। তখন তারা দীর্ঘ সময় সেখানে অবস্থান করে। রেস্তোরাঁটি ঘুরে ঘুরে দেখে ও পুরো রেস্তোরাঁ সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেয়। হামলার দিন (১ জুলাই) বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ফ্ল্যাটে জঙ্গিদের প্রস্তুত থাকতে বলে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে হলি আর্টিজানে যান হাসনাত রেজা। সেখানে যাওয়ার পর তিনি কাক্সিক্ষত সংখ্যক বিদেশিকে দেখতে পান। এরপরই ‘থ্রিমা’ নামক মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিদেশি আছে এই তথ্য নিশ্চিত করেন জঙ্গিদের এবং প্রস্তুতি নিয়ে তাদের আসতে বলেন হলি আর্টিজানে। হাসনাতের গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে তারা অস্ত্রসজ্জিত হয়ে হেঁটে হলি আর্টিজানে আসে। রেস্তোরাঁর ভেতরেও হামলাকারীদের দিকনির্দেশনা দেন তিনি। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি