গ্রেফতার ৩ হাজার, ৬ জনের ফাঁসি, ফাঁসির অপেক্ষায় ৩১৫ জঙ্গিহামলায় ১৭ বছরে ২ শতাধিক নিহত, আহত ২ সহস্রাধিক
আজাদ হোসেন সুমন : গত ১৭ বছরে দেশে জঙ্গিহামলার ঘটনায় ২ শতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে ২ সহস্রাধিক। এসব ঘটনায় প্রায় ৩ হাজার জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ফাঁসি কার্যকর হয়েছে ৬ জনের। ৩১৫ জনের ফাঁসির দ-সহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে আরও প্রায় ৫শ জঙ্গির। অধিকাংশ জঙ্গি আইনের ফোকর গলে জামিনে বেরিয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
১৯৯৮ সালে হুজি থেকে বেরিয়ে গিয়ে শায়েখ আব্দুর রহমান জামালপুরে ‘জামাআ’তুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ’ গঠন করেন। পরের বছর কাওসার হুসাইন সিদ্দিকী নামে একজন গড়ে তোলে আরেকটি জঙ্গি সংগঠন- শাহাদাত-ই আল হিকমা। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের অংশ হিসেবে ২০০১ সালে ‘হিযবুত তাহরীর’ নামে আরও একটি জঙ্গি সংগঠন আতœপ্রকাশ করে।
বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার সূচনা হয় ১৯৯৯ সালে। যশোরের টাউন হলে উদীচীর অনুষ্ঠানে জঙ্গিদের ছোড়া গ্রেনেড হামলায় ১০ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়। এরপর ২০০১ সালে খুলনার কাদিয়ানি মসজিদে হামলায় ৮ জন নিহত ও ২০ জন আহত, ২০০১ সালে পল্টন ময়দানে সিপিবির অনুষ্ঠানে ৫ জন নিহত, আহত হয় ৫০ জন, ২০০২ সালে রাজশাহীতে নিহত ৪, আহত ৫০, সাতক্ষীরায় সিনেমা হল ও স্টেডিয়ামে নিহত ৩, আহত ১৫, ২০০৩ সালে ময়মনসিংহের অজন্তা, ছায়াবীথি, অলকা ও পূরবী সিনেমা হলে জঙ্গিহামলায় ১৮ জন নিহত হয়, ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের জনসভায় ২৪ জন নিহত ও ৫ শতাধিক আহত হয়। ২০০৫ সালে বোমাহামলায় নতুন মাত্রা যোগ হয়। হামলা হয় আদালতে-এজলাস ও এনজিওতে। লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ঝালকাঠি, গাজিপুরের বিভিন্ন আদালতে হামলায় বিচারক সোহেল আহমেদ চৌধুরী, বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে ও কয়েকজন আইনজীবীসহ নিহত হয় ১৮ জন, আহত ৯০ জনেরও বেশি। রাজশাহীর বাগমারা রানীনগর আত্রাই গোপালগঞ্জ, মাদারীপুরসহ সিলেটে অর্থমন্ত্রী এসএএমএস কিবরিয়াসহ দেশের বিভিন্নস্থানে জঙ্গিহামলায় শতাধিক নিহত ও সহস্রাধিক আহত হয়।
২০০৬ সাল থেকে ১২ সাল পর্যন্ত দেশে কোনো জঙ্গিহামলার ঘটনা ঘটেনি। ২০১৩ সালে নাস্তিকতার ব্যাখ্যায় ‘টার্গেট কিলিং’ শুরু করে এক হামলার শিকার হয় ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন, রাজিব হায়দার, জগতজ্যোতী তালুকদার, সানাউল রহমান, আরিফ রায়হান দ্বীপ, উম্মুল মোমিনিন তৈয়ুবুর রহমান ও তার পুত্র, তন্ময় আহমেদ, জাকারিয়া বাবু ও পীর লুতফর রহমানসহ ৬ জন। এ ধরনের হামলা পরের বছরেও চলতে থাকে। সে বছরের শিকার রাহয়ান রাহি, উলাহ দাস, রাকিব, টিভি উপস্থাপক শেখ নুরুল ইসলাম ফারুকী, আশরাফুল ইসলাম এবং সর্বশেষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক একেএম শফিউল ইসলাম। এরপর চলতি মাসের ১ তারিখ গুলশানে ২৮ জন, ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ৪ জন নিহত হয়। এসব ঘটনায় র্যাব-পুলিশসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ৩ সহস্রাধিক জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে। এরমধ্যে শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইসহ শীর্ষ ৬ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর করা হয় ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ। ৩১৫ ফাঁসির দ-প্রাপ্ত জঙ্গির আবেদন উচ্চ আদালতে ঝুলে আছে।
সূত্র মতে, গ্রেফতার হওয়া ৩ হাজার জঙ্গির মধ্যে অধিকাংশই জামিনে মুক্তি পেয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সম্প্রতি জঙ্গিদের অনায়াসেই জামিনে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং আদালতসহ সংশ্লিষ্টদের আরও মনোযোগী হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। আইজিপি একেএম শহীদুল হকও সম্প্রতি জঙ্গিদের গ্রেফতার, এজাহার, অভিযোগ গঠন সব কিছু সতর্কতার সঙ্গে সম্পন্ন করার নির্দেশনা দিয়েছেন মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম