সরকার ও ইসলামী চরমপন্থিদের প্রতি একটি অনুরোধ
ড. কালাম আজাদ, অস্ট্রেলিয়া থেকে : সব হত্যাই অপরাধ। কিন্তু তার পরও তথাকথিত ‘মুক্তচিন্তাবিদ’, নাস্তিক এবং সমকামী সমর্থকরা যখন একে একে হত্যার শিকার হচ্ছিল তখন কেউই তেমন একটা গা মাখায়নি। সাধারণভাবে সবাই হয়তো ভেবেছিল, যারা শতকরা নব্বই ভাগের বেশি মুসলমানের এ দেশে মুসলমানদেরই ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত হানছে তারাই হত্যার শিকার হচ্ছেÑ হোক। কিন্তু সাম্প্রতিককালে হিন্দু, বিদেশি, নারী, শিশু, সাধারণ মানুষ যারা ইসলাম ধর্মে আঘাত করছে না তাদেরও হত্যা করা হচ্ছে।
হত্যাকারীরা আইএস, জেএমবি, আনসার আল ইসলাম বা যারাই হোক তারা দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে এসব হত্যাকা- ঘটাচ্ছে। তারা তাদের এ কর্মকা-কে ইসলামী ‘জেহাদ’ হিসাবে বর্ণনা করে বেশকিছু তরুণ এমনকি তাদের পিতা-মাতাদেরও এই জেহাদে অংশ নিতে আকৃষ্ট করছে।
ফল হিসাবে দেশজুড়ে একটা আতঙ্কের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। কখন কে জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারায়, আবার কাকে কখন পুলিশ-র্যাব ধরে নিয়ে যায় বা কার কোন জঙ্গি সন্তান কখন ‘ক্রস ফায়ারের’ শিকার হয়Ñ এসব এখন দেশবাসীর, বিশেষ করে শহরবাসীর নিত্যদিনের সাথী। এ অবস্থা দেশের অর্থনীতি এবং বিভিন্ন দেশের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
প্রশ্ন হলো- এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া যায় কিভাবে? সরকার এবং ইসলামী চরমপন্থিরা সম্মুখ সমরে মুখোমুখি অবস্থান করছে। কিন্তু শুধু অস্ত্র দিয়ে শক্তি প্রয়োগ করে কি সরকারের পক্ষে এ পরিস্থিতির মোকাবিলা করা সম্ভব? আবার কিছু তরুণের হাতে কেবল অস্ত্র তুলে দিয়ে কিছু হামলা চালিয়েই কি ইসলামী চরমপন্থিরা এদেশে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবে? এ ক্ষেত্রে দেশের ব্যাপক গণ-মানুষের মন জয় করাটা খুবই জরুরি।
তাই দেশ, দেশের মানুষ এবং ইসলামের স্বার্থে সকলকে জানানো দরকার আসলে ইসলামে জিহাদ কি, কখন কি পরিস্থিতিতে এবং কার বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হয়। বিশেষ করে নারী, শিশু ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করা জিহাদ অনুমোদন করে কি-না, কুরআন বা হাদিসের কোন অংশে কিভাবে এসবের উল্লেখ আছে বা নাই তার একটি বিশ্বস্ত ও ব্যাপক প্রচার এখন জরুরি।
এ ধরনের প্রচার হতে পারে বিলবোর্ডে, পোস্টারে, লিফলেটে, টিভিতে, সংবাদপত্রের প্রথম পাতার বিজ্ঞাপনে। এ ধরনের প্রচারণার উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য সরকার এবং ইসলামী চরমপন্থি উভয় পক্ষকেই স্ব-স্ব অবস্থান থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করছি।