নিখোঁজ ডিবিসিসিআই প্রেসিডেন্টের লাশ উদ্ধার
সুজন কৈরী : নিখোঁজের তিন দিন পর ডাচ-বাংলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্র্রিজের (ডিবিসিসিআই) সভাপতি হাসান খালেদের ভাসমান লাশ বুড়িগঙ্গা নদী থেকে উদ্ধার করেছে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) মর্গে পাঠানো হয়। সেখানে নিহত হাসান খালেদের ছোট ভাই মুরাদ হাসান গিয়ে ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন।
মুরাদ বলেন, পরনের কাপড়, হাতঘড়ি, গাড়ির চাবি, জুতো ও পরনের পোশাক ইত্যাদি দেখে আমরা নিশ্চিত হয়েছি এটি আমার বড় ভাই হাসান খালেদের লাশ। তবে কি কারণে তার ভাই নিখোঁজ ও পরে তার লাশ নদী থেকে উদ্ধার এই মুহুর্তে কোনো কিছুই বলতে পারেননি।
এদিকে মর্গের সামনে আহাজারি করতে করতে নিহত হাসান খালেদের দুই ভাই মুরাদ ও রাশেদ বলতে থাকেন, আমাদের তো কোনো শত্রু নেই। কেন আমার ভাইকে মারলো, কীভাবে মারলো কিছুই বুঝতে পারছি না।
কেরানীগঞ্জ মডেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে বেলা ১২টার দিকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। লাশের পকেটে থাকা কয়েকটি ভিজিটিং কার্ড, গাড়ির চাবি, মানিব্যাগে কিছু টাকা এবং হাতে হাতঘড়ি পাওয়া গেছে। তবে তার সঙ্গে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসেট পাওয়া যায়নি। এগুলো পেয়ে এটি নিখোঁজ ব্যবসায়ী হাসান খালেদের বলে সন্দেহ হয়। পরে ভিজিটিং কার্ডে থাকা অফিসের টেলিফোন নাম্বারে যোগাযোগ করে লাশের খবর জানানো হয়। এরপর নিহতের ছোট ভাই মুরাদ হাসান, তার অফিসের নিউ ইরা ট্রেডিংয়ের ম্যানেজার অপারেশন কে এম রিয়াদ ফয়সাল ও ভাইসহ অন্যান্য স্বজনরা এসে হাসান খালেদের লাশ শনাক্ত করেন। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহতের মামা হুমায়ন কবীর জানান, আমার ভাগ্নে ভদ্র ও শান্ত স্বভারের মানুষ ছিলেন। ধানমন্ডির ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন। কাছেই জিগাতলায় পৈত্রিক বাড়িতে থাকেন তার অন্য ভাইয়েরা। তার বাবার নাম মৃত. মোঃ মোহসীন। তার গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার ছাগল নাইয়া থানার পূর্ব জয়পুরে। নিহতের পরিবারে শোকের মাতম চলছে।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি ফেরদাউস হোসেন জানান, প্রথমে অজ্ঞাত হিসাবে ওই ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে তার প্যান্টের পকেটে থাকা ভিজিটিং কার্ড থেকে স্বজনদের খবর দেওয়া হলে তারা এসে লাশ শনাক্ত করেন। কয়েকদিন পানিতে থাকায় মরদেহে পচন ধরে ফুলে গেছে। ফলে আঘাতের চিহ্ন আছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হত্যার পর পরই গুমের উদ্দেশ্যে দুর্বৃত্তরা লাশটি নদীতে ফেলে গেছে।
গত ২৩ জুলাই সকালে ওষুধ আনতে ধানমন্ডির ৪/এ নম্বর রোডের ৪৫ নম্বর বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন ব্যবসায়ী খালেদ হাসান। এ ঘটনায় ওইদিন রাতে ধানম-ি থানায় জিডি (নম্বর ১০৫৫) করেন তার শ্যালক শরিফুল আলম।
এ বিষয়ে রমনা জোনের ডিসি মারুফ হোসেন সরদার বলেন, হাসান খালেদের পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। একইসাথে ইস্কাটনে তার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা পুলিশকে জানিয়েছেন, তাদের বা হাসান খালেদের কোনো শত্রু নেই। কোনো হুমকিও পাননি খালেদ। কাউকে তারা সন্দেহও করছে না। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে। তবে সম্প্রতি হাসান খালেদের ব্যবসা ভাল যাচ্ছে না। এ কারণে তিনি মানসিক অবসাদগ্রস্ত ছিলেন বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।
পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর হত্যার বিষয়ে জানা যাবে। এছাড়া ঘটনার তদন্তে ওই ব্যবসায়ীর বাসার আশপাশের এলাকার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অপরদিকে তার অবস্থান শনাক্তে প্রযুক্তির সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে, তবে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকায় তার সর্বশেষ অবস্থান ওই বাসার নিচ তলা নির্দেশিত হয়। ঘটনার তদন্ত চলছে। পরে বিস্তারিত বলা যাবে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি