একক কোনো ব্যক্তি অর্থায়ন করছে না চর এলাকাসহ কল্যাণপুর উত্তরায় জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে দেশে। জঙ্গিরা বেশ কয়েকটি জেলায় এই প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। ওইসব এলাকাকে চিহ্নিত করার জন্য কাজ করছে গোয়েন্দারা। তারা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি সন্দেহজনক এলাকাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছে। এরমধ্যে কল্যাণপুর, উত্তরা ও বসন্ধুরাও রয়েছে। ঢাকার ওইসব এলাকায় গোয়েন্দারা বিভিন্ন টিম নিয়ে কাজ করছে।
প্রশিক্ষণ শেষে জঙ্গিরা বিভিন্ন বাসাবাড়িতে অবস্থান করে হামলা করার জন্য। আরও বেশ কয়েকটি হামলার ছক আঁকছে জঙ্গিরা। এই সব তথ্য আরও সুনির্দিষ্ট করে বের করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দারা মূলহোতাদের বের করার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন জঙ্গি নেটওয়ার্কে তারা এই ব্যাপারে তথ্য জেনেছে। আটককৃত জঙ্গিরা কিভাবে প্রশিক্ষণ নিয়েছে এবং কোথায় কোথায় নেটওয়ার্ক আছে সেসব বিষয়ে তথ্য দিয়েছে। এটাও বলেছে চর এলাকায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ নিরাপদ কারণ সেখানে সাধারণ মানুষের চলাচল নেই। তবে সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে শেরপুরে ও বগুড়ার চরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এছাড়াও ঝিনাইদহসহ বেশ কয়েকটি জেলায় অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জঙ্গিদের কাছ থেকে জানা গেছে তারা কোথায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। কারা এর অর্থদাতা। এই পর্যন্ত একক কোনো ব্যক্তির নাম পায়নি গোয়েন্দারা। বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমেই অর্থ আসছে। গুলশান হামলার পর বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে কয়েকজন জঙ্গিকে আটক করা হয়েছে। তারা বলেছে, বিভিন্নস্থানে তাদের লোকেরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে আরও বড় ধরনের হামলা ও নাশকতার ঘটনা ঘটানোর জন্য।
সূত্র জানায়, জঙ্গিরা এটাও জানিয়েছে, যেখানে নিরাপত্তা বেশি সেখানে তারা হামলা করবে না কিংবা পরিকল্পনা নেই। কারণ ওইসব জায়গায় সব সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকে। এছাড়াও সিসিটিভিসহ আরও বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। এই কারণে ওই সব জায়গা তারা এড়িয়ে চলে। আরও জানিয়েছে, তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা তেমন জোড়ালো নেই এমন জায়গা বেছে নেবে পরবর্তী হামলার জন্য।
প্রশিক্ষণের ব্যাপারে বলেছে, প্রশিক্ষণের বেলায়ও তারা ওই ধরনের এলাকা বেছে নেয় যেখানে কোনো মানুষের চলাচল নেই। অনেক বড় বড় চর ও জঙ্গল এলাকা। সেখানে তারা স্থানীয় কিছু মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই সব ধরনের সহায়তা পেয়ে থাকে। এজন্য তারা খুব একটা লোকালয়ে আসে না। তাই তাদেরকে অনেক এলাকায়ই অন্যরা দেখতে পায় না। প্রশিক্ষণের জন্য বড় ধরনের অস্ত্রের প্রয়োজন নয় বরং ধারালো অস্ত্রের ব্যবহার বেশি হয়। সেগুলো তারা সাধারণ বাজার থেকেই কিনে নেয়। মাঝে মাঝে বড় ধারালো অস্ত্রের অর্ডার দিয়ে থাকে। নিজস্ব জনবলও রয়েছে ওই ধরনের অস্ত্র তৈরি করার জন্য। কারণ তাদের বড় একটি নেটওয়ার্ক রয়েছে অস্ত্র কেনা-বেচা ও ভাড়া দেওয়ার জন্য।
সূত্র জানায়, চর ও জঙ্গল এলাকায় তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে এরপর তারা রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেয়। এরমধ্যে উত্তরা, কল্যাণপুর, বসুন্ধরা এলাকাতে তারা বাসা ভাড়া নেয়। বেশিরভাগ সময় তারা মেস বাসাগুলো ভাড়া নেয়। মেসে থাকলে তাদের জন্য সুবিধা হয় নিজেরা স্টুডেন্ট ও চাকরিজীবী ব্যাচেলর হিসাবে পরিচয় দিতে পারে। সেই সঙ্গে তাদেরকে পরিবারের ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে হয় না। অন্যদের সহায়তায় বাসা পেতেও সুবিধা হয়। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কথাও তারা জানতে পারে মেসের পার্টনারের মাধ্যমে। সেই হিসাবে তারা জঙ্গিদের অন্যান্য কানেকশনের সঙ্গে তথ্য আদান প্রদান করে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তাদের লোকজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
জঙ্গি দমনে কাজ করছেন এই রকম একটি সূত্র জানায়, জঙ্গিরা দেশেই প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। কেউ কেউ বিদেশে চলে গেছে। গুলশানের ঘটনার পর যে তিনজন যমুনা ফিউচার পার্কে হামলার হুমকি দিয়েছিলো তারা দেশে নেই। জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি