পরিচয় মিলেছে সাত জঙ্গির
নিজস্ব প্রতিবেদক : কল্যাণপুরে পুলিশি অভিযানে নিহত নয় জঙ্গির মধ্যে সাত জঙ্গির পরিচয় নিশ্চিত করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তারা হলো- জোবায়ের হোসেন, সেজাদ রউফ অর্ক ওরফে মরক্কো, আব্দুল্লাহ, আবু হাকিম নাঈম, তাজুল হক রাশিক, আতিকুজ্জামান ও মতিয়ার রহমান।
জাতীয় পরিচয়পত্রের আঙ্গুলের ছাপের সঙ্গে জঙ্গিদের আঙ্গুলের ছাপ মিলিয়ে পরিচয় সম্পর্কে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে বলে জানান ডিএমপির জনসংযোগ শাখার উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান।
জানা যায়, সেজাত রউফ অর্ক ওরফে মরক্কো নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ছাত্র ছিলেন। গুলশান হামলায় নিহত জঙ্গি নিবরাসের বন্ধু ছিলেন অর্ক। তার বাবার নাম তৌহিদ রউফ। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সি ব্লকে ৩০৪ নম্বর বাড়িতে তার পরিবারের বাস। শাহবাগ থানার একটি অস্ত্র মামলার আসামি ছিল সে। র্যাব ঘোষিত নিখোঁজদের সর্বশেষ ৬৮ জনের তালিকায় তার নাম ছিল। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ভাটারা থানায় তার বাবা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এদিকে, র্যাবের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী (প্রথম পর্ব) সেজাদ আমেরিকান পাসপোর্টধারী। এরই মধ্যে তার ফিঙ্গার প্রিন্ট ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সঙ্গে মিল পেয়েছে পুলিশ। বুধবার দুপুর নাগাদ মার্কিন দূতাবাসের একজন কর্মকর্তাসহ অর্কের পরিবারের সদস্যরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আসেন। তারা ভেতরে প্রবেশের সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
নিহত অপর জঙ্গি জোবায়ের হাসান (২০)। তিনি নোয়াখালী সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার বাবার নাম আবদুল কাইয়ুম। তিনি নোয়াখালীতে আল-আমিন বিস্কুট কারখানার ভ্যানচালক। দুই মাস আগে জুবায়ের বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। এ ব্যাপারে নোয়াখালীর সুধারামপুর থানায় গত ২৫ মে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
জানা যায়, মে মাসের ৪ তারিখ থেকে জুবায়ের নিখোঁজ রয়েছে। স্থানীয়ভাবে সে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি করতো। বুধবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছবি দেখে তারা জুবায়েরকে চিনতে পারে।
জোবায়েরের পরিবারের ধারণা- জোবায়েরের চাচাতো ভাই বাহাদুর জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার যোগসাজশে সে ঢাকায় গিয়ে জঙ্গি দলে যোগ দেন। জুবায়েরের ভগ্নিপতি জানান, জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বাহাদুর দীর্ঘদিন থেকে নিখোঁজ। তার মাধ্যমে তার শ্যালক জুবায়ের হোসেন জঙ্গি দলে যোগ দেয়।
নিখোঁজ বাহাদুরের শ্বশুর নূরুল আমিন জানান, তার জামাতা সৌদি আরব থেকে আসার পর স্থানীয় জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যোগ দেয়। বিভিন্ন সময়ে সে বাড়িতে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর ওয়াজের ক্যাসেট শুনতো আর বাড়ির যারা আওয়ামী লীগ করতো তাদের কাফের বলতো।
তিনি আরও জানান, জুবায়ের স্কুলজীবন থেকে শিবির করতো। একবার তাকে তাবলীগে পাঠানো হয়েছিল। সে তাবলীগ থেকে এসেও শিবিরের রাজনীতি ছাড়েনি।
২৩ বছর বয়স্ক আবদুল্লাহ দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থানার বল্লভপুর গ্রামের, বাবা মো. সোহরাব আলী ও মা মোসা. মোসলেমা খাতুন, জাতীয় পরিচয়পত্র নং- ২৭২০৪৯০০০০৩০।
আবু হাকিম নাঈমের (৩৩) বাবা নুরুল ইসলাম, মা মোসা. হালিমা, গ্রাম : কুয়াকাটা, থানা : কলাপাড়া, জেলা : পটুয়াখালী, জাতীয় পরিচয়পত্র নং- ৭৮১১০৩০০০৩৬৯।
ধানমন্ডির বাসিন্দা তাজুল হক রাশিক (২৫) রবিউল হকের সন্তান। রাশিকের মা জাহানারা বেগম, ওয়ার্ড নং : ১৫, বাসা : ৭২, রোড: ১১/এ ধানমন্ডি, ঢাকা, জাতীয় পরিচয়পত্র নং- ২৬১৩৫০০০০৩৯৭।
গুলশানের বাসিন্দা আকিফুজ্জামান খান (২৪) সাইফুজ্জামান খানের সন্তান। তার মা শাহানাজ নাহার, বাসা নং: ২৫, রোড- ১০, গুলশান, ঢাকা, জাতীয় পরিচয়পত্র নং- ২৬১১০৬০০১০০৬।
সাতক্ষীরার তালা থানার ওমরপুর গ্রামের নাসিরউদ্দিনের সন্তান মতিয়ার রহমান (২৪)। তার মা মোসা. খাইরুন্নেসা। মতিয়ারের জাতীয় পরিচয়পত্র নং- ৮৭০১৮১০০০০০৩।
ডিএমপির ডেপুটি কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, তিনজনের (শেহজাদ রউফ, জুবায়ের হোসেন ও সাব্বিরুল হক কনিক) পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা ডিএমপির প্রকাশিত ছবি দেখে পরিচয় নিশ্চিত করেছে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে মর্গে গিয়ে স্বজনদের লাশ শনাক্ত করতে অনুরোধ করা হয়েছে। লাশ শনাক্তের পর জঙ্গিদের স্বজনদের ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। তারপর লাশ হস্তান্তর করা হবে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি