রোবট যখন প্রাণীদের হাঁটাচলা নকল করে
ডয়চে ভেলে: প্রাণীদের চলার ভঙ্গি নকল করে রোবট তৈরির প্রচেষ্টা আগেই শুরু হয়ে গেছে। ভিডিও এক্স-রে সেই কাজ আরও নিখুঁত করে তুলতে পারে। শুধু মুভমেন্ট নয়, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যও যন্ত্রের মধ্যে আনার চেষ্টা চলছে।
আসলে মুভমেন্ট বা মোশন ব্যাপারটা কী? প্রাণিবিদ প্রো. মার্টিন ফিশার বিষয়টি বুঝিয়ে বললেন। ‘মুভমেন্ট হলো চিন্তা ও মস্তিষ্কের ভাবের বহিঃপ্রকাশ। যা ভাবা হয়, তা গতিতে পরিণত হয়। যেমন ভাষার ক্ষেত্রে এটা ঘটে। কোনো জীবকে বুঝতে চাইলে তার মুভমেন্ট সম্পর্কেও জ্ঞান অর্জন করতে হয়। তাছাড়া মুভমেন্ট আসলে অত্যন্ত মুগ্ধ করার মতো বিষয়।’
কুকুরের বিবর্তন এই প্রাণিবিদের কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। প্রজননের মাধ্যমে কয়েকশ রকমের কুকুরের জাত সৃষ্টি হয়েছে। এ এক অসাধারণ প্রাকৃতিক এক্সপেরিমেন্ট। কুকুরের এগিয়ে চলার উপর তার কতটা প্রভাব পড়েছে? এক্স-রে ভিডিও দেখিয়ে দিচ্ছে, যে ছোট-বড় সব জাতের কুকুরের হাঁটার কায়দা একেবারে এক। শুধু একটি প্রশ্নের উত্তর জানা নেই। এমনকি শিকারের সময়েও কুকুর কখনো কেন পড়ে যায় না?
এক্স-রে ভিডিও দিয়ে নিখুঁত এক কম্পিউটার অ্যানিমেশন তৈরি হয়। ফলে কঙ্কাল ও পেশি সঞ্চালনের সবটাই স্পষ্ট দেখা যায়। কিন্তু শরীরের এই জটিল ক্রিয়া কীভাবে চলে? মস্তিষ্ক অথবা পায়ের মধ্যে কি এক কনট্রোল রুম রয়েছে?
এই প্রশ্নের উত্তর পেতে গবেষকরা বিশেষ এক কৌশল অবলম্বন করে এক্সপেরিমেন্ট চালান। প্রথম পরীক্ষা ছিল ইঁদুর দিয়ে। সেটিকে ট্রেডমিলের উপর ছেড়ে দিয়ে একটি ফাঁদের দিকে পাঠানো হয়। উল্কার গতিতে সে প্রতিক্রিয়া দেখায়। একমাত্র পায়ের মধ্যে সরাসরি কোনো ‘ইন্টেলিজেন্ট মেকানিস্ক’ না থাকলে এত দ্রুত মুভমেন্ট সম্ভব নয়। প্রো. ফিশার বলেন, ‘ইঁদুরকে ফাঁদের মধ্য দিয়ে দৌড়াতে দেওয়ার পরীক্ষা চালিয়ে আমরা প্রমাণ করতে পারলাম যে, মস্তিষ্ক থেকে নির্দেশ আসার আগেই পায়ের নিজস্ব প্রতিক্রিয়া সত্যি ঘটে। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়, যে পায়ের মধ্যে স্থানীয় বুদ্ধিমত্তা রয়েছে।’
গবেষকদল ইঁদুরের মই বেয়ে ওঠার কায়দার রহস্যও উন্মোচন করেছে। রোবট তৈরির ক্ষেত্রে সেই কায়দা কাজে লাগাচ্ছেন ইঞ্জিনিয়াররা। ফলে ক্যামেরা ও সেন্সর-সহ এমন এক রোবট তৈরি করা সম্ভব হয়েছে, যা সরু পাইপ বা তার বেয়ে দিব্যি উঠে যেতে পারে। প্রো. মার্টিন ফিশার বলেন, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোবট মানেই কোনো এক জায়গা থেকে তা কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। ইংরেজিতে যাকে কন্ট্রোল বলা হয়। অর্থাৎ উপর থেকে নির্দেশ আসতে হবে। সেই নির্দেশ পাঠালে তা পালন করতে হয়। কিন্তু প্রকৃতিতে এমনটা হয় না। প্রকৃতিতে মুভমেন্ট কোনো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে ঘটে না। পায়েদের নিজস্ব বুদ্ধি রয়েছে। একে ‘ইন্টেলিজেন্ট মেকানিক্স’ বলা চলে। রোবট তৈরির ক্ষেত্রে এই বৈশিষ্ট্য যোগ করা একজন বায়োলজিস্টের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।’
মার্টিন ফিশার তাঁর স্বপ্ন পূরণ করেছেন। এমন এক অসাধারণ জগতে তিনি প্রবেশ করতে পেরেছেন, যা এতকাল আমাদের চোখের আড়ালে ছিল।